• চলে গেলেন 'আলোর মানুষ' বাবু পাল! আলোর শহরে শোকের অন্ধকার...
    ২৪ ঘন্টা | ২১ আগস্ট ২০২৪
  • বিধান সরকার: আলোর শহর চন্দননগরে অন্ধকার! চলে গেলেন বাবু পাল। ইদানীংকালে চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পাল। তাঁর আলো ছাড়া চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজো যেমন হয় না, তেমনই হয় না কলকাতার অনেক দুর্গাপুজোও। অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি আলো দিয়ে সাজিয়েছিলেন, রাজ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন বাবু পাল। বাবু পালের মৃত্যুতে শোকের ছায়া চন্দননগরে। বাবু পালের মৃত্যুতে সত্যিই অন্ধকার চন্দননগর।

    পুজো এলেই কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে চন্দননগর পঞ্চাননতলার বাবু পালের আলোর স্টুডিও। যেখানে হরেক আলো। আলোর মেলা। প্রতি বছরই নতুন নতুন আলোর জাদু নতুন কিছু সৃষ্টি ছিল বাবু পালের আলোর আকর্ষণ। সেই আলোকশিল্পী প্রয়াত হলেন ৬৪ বছর বয়স। তিন বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন। গতকাল গভীর রাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী চিত্রলেখা পাল আলোর কাজ দেখাশোনা করেন।

    চন্দননগরে আলোর জাদুকর বলা হয় শ্রীধর দাসকে। দেশ-বিদেশে নানা ধরনের আলোর সাজের মাধ্যমে চন্দননগরের আলোকে প্রথম বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন তিনিই। তববে এর পরই বাবু পাল তাঁর নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় চন্দননগরের আলোকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। সুপ্রিম কুমার পাল হয়ে ওঠেন বাবু পাল। দিওয়ালিতে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের মুম্বইয়ের বাড়ি সাজানোই হোক অথবা দুবাইয়ে শপিং ফেস্টিভ্যাল, অথবা প্যারিস--  সর্বত্র বাবু পালের ডাক পড়ত। হালের শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো থেকে কলকাতার একাধিক নামী দুর্গা পুজো কমিটি বাবু পালের আলোতেই সেজে ওঠে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায় বাবু পালের আলো অন্যতম আকর্ষণ।

    কলকা আর টুনি বাল্বের আলোর বিবর্তন ঘটিয়ে এলইডি আলো দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন বাবু। এবং তাতে সফলও হয়েছিলেন। প্রতি বছর সাম্প্রতিক ঘটনাবলির উপর থিমের আলো তৈরি করে তাক লাগাতেন তিনি। বারোয়ারি পুজোগুলো শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করত কী আলো তৈরি করে অন্যদের মাত করে দেওয়া যায়! আর সেজন্য তাঁদের ভরসা ছিল সেই বাবু পালই। ছোটোদের মজার আলো, ডিজনি ল্যান্ড থেকে মিকি মাউস এলইডি আলোতে সাজিয়ে তুলতেন তিনি। অলিম্পিক বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে শুরু করে যেকোনো বড় ইভেন্ট-- অনায়াসেই তা আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন বাবু।

    সমসাময়িক চন্দননগরে অন্য আলোক শিল্পীদের থেকে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন বাবু পাল। তাই শ্রীধর দাসকে ছাপিয়ে পরবর্তীকালে বাবু পালই যেন চন্দননগরের আলোর সঙ্গে সমার্থক হয়ে যান। করোনার সময় দু'বছর যখন কোনও কাজ ছিল না তাঁর হাতে, তখনও কর্মচারীদের ছুটি দেননি। অন্য আলোক শিল্পীদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তাই কর্মচারীরা তাঁকে ভোলেননি। বাবুদার প্রয়াণ তাই তাঁদের কাছে অভিভাবক হারানোর মতো।

    আলোক শিল্পীর শেষযাত্রায় তাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা।

    চন্দননগর করপোরেশনের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, কাউন্সিলর-সহ চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য ও শহরের অনেকেই আসেন বাবু পালকে শ্রদ্ধা জানাতে। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, বাবু পাল নেই কিন্তু তাঁর কাজ থেকে যাবে। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, শিল্পীর কখনো মৃত্যু হয় না। বাবু পাল অনেক কষ্ট করে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। চন্দননগরে শ্রীধর দাসের হাত ধরে যেমন অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছেন, তেমনই বাবু পালের হাত ধরেও অনেক শিল্পী এসেছেন। তাঁরা আগামী দিনে চন্দননগরের আলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্বের দরবারে চন্দননগরের আলোকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাবু পালই।

    আর যাঁর সঙ্গে তাঁর নাম একত্রে উচ্চারিত হচ্ছে, কী বলছেন সেই শ্রীধর দাস? শ্রীধর দাস বলেন, বাবু আমার অনেক পরে কাজ শুরু করেন। আগে লোহার ব্যবস্থা করত। পঞ্চাননতলায় একজনের থেকে আলো কিনে বাবু কাজ শুরু করেন। অলোক প্রামাণিকের কাছে কাজ শিখেছিলেন। তারপর নিজের চেষ্টাতেই উনি এতদূর পৌঁছেছেন। ভালো লাগে, যখন চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পালের নাম আসে। ওঁর চলে যাওয়াটা দুঃখের।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)