নন্দন দত্ত, সিউড়ি: আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের স্বামীর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের চিনতেই পারলেন না বগটুই কাণ্ডে নিহত ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবি। বুধবার রামপুরহাট আদালতে টেবিলা বিবি এবং স্থানীয় বাসিন্দা সূরজ তিওয়ারির হাজিরা ছিল। অভিযুক্তদের চিনতে না পারার নেপথ্যে অন্য কোনও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ বগটুইয়ে উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন। এর পর এলাকারই ১০ জনকে জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তভার নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সূরজ তিওয়ারির বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। ওই সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে জানা যায়, ঘটনার রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন ভাদু শেখ। সেই সময় দুটি মোটরবাইকে চড়ে চারজন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারাই খুন করে ভাদু শেখকে। সূরজ তিওয়ারিও এদিন আদালতে হাজিরা দিয়ে সেকথা জানান। তিনি বলেন, “২টি মোটরবাইকে করে ৪ জন আসে। বোমা মারে। আতঙ্কে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম।” সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী জানান, “সেদিন যা ঘটেছে, সেটি আদালতে বলেছেন। সূরজ মামলার তদন্তে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছেন।” এদিকে, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী রঞ্জিত গঙ্গোপাধ্যায় সূরজের বাড়ির সিসি ক্যামেরা ফুটেজকে ‘সন্দেহজনক’ বলে দাবি করেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “ভাদু শেখ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে কেউই ছিলেন না। সূরজের কাছ থেকে যে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে তা সন্দেহজনক। আদৌ সেই সিসিটিভি ফুটেজ তিনি দিয়েছেন কিনা, সে সম্পর্কিত যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে।” আইনজীবীর অভিযোগ, সিবিআইয়ের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলেছেন সূরজ।
এদিন আদালতে ভাদু শেখ খুন অভিযুক্ত মাহি শেখ, নিউটন শেখ, পলাশ শেখ, ফেরা শেখ, সফি শেখ, ভাসান শেখ ও সোনা শেখ নামে সাতজনকে হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরা দেন নিহত ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবিও। তিনি অভিযুক্তদের কাউকেই চিনতে পারেননি। তাঁর দাবি, ঘটনাস্থলে ছিলেন না তিনি। বাড়ির ভিতরে ছিলেন। তাই কাউকেই তাঁর পক্ষে চেনা সম্ভবপর নয়। তবে সিবিআই আইনজীবী পার্থ তপস্বী এই দাবি মোটেও মানতে রাজি নন। তিনি জানান, ওই সাত অভিযুক্ত একসময় ভাদু শেখ ও তাঁর পরিবারের উপর অত্যাচার করে। বাধ্য হয়ে বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়া থেকে ভাদু শেখ সপরিবারে গ্রামছাড়া হয়ে যান। রামপুরহাটে থাকতে শুরু। তাহলে কেন চিনতে পারছেন না টেবিলা বিবি, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।