• বিশ্বভারতীর সম্মানহানি করতেই ভুয়ো লোকের দুর্নীতির অভিযোগ
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: বিশ্বভারতীর আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো। দিন কয়েক আগে জনৈক অতুল ভার্গব নামে এক ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ছ’জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক, ইউজিসি সহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ জানান। সেই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় শান্তিনিকেতনে। তার প্রেক্ষিতে বুধবার ‘বর্তমান’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অশোকবাবু বলেন, অভিযোগকারী সম্পূর্ণ ভুয়ো। মিথ্যা অভিযোগ করে বিশ্বভারতীর সম্মানহানির চেষ্টা করছেন। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের কেউ যুক্ত। মিথ্যা তথ্য বাজারে ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছেন। তবে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 

    বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা বিভাগ সহ, গভর্মেন্ট ই-মার্কেট, সম্পত্তি বিভাগ, লিগাল সেল, অ্যাকাউন্টস ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। সেখানে নিরাপত্তা বিভাগে অতিরিক্ত বেতন বাবদ কয়েক কোটি টাকা, গভর্মেন্ট ই-মার্কেটে ৫০ শতাংশ কমিশন, আইনি লড়াইয়ের জন্য লিগাল সেলে আর্থিক তছরূপ এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বিক্রির মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয় ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তার প্রেক্ষিতে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জবাবদিহি তলব করে। বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখে ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অনুচ্ছেদ ধরে ধরে অভিযোগের উত্তর দেন। পাশাপাশি, যে সমস্ত বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে সেখানে তথ্য যাচাইয়ের জন্যেও অভিযোগকারীকে আহ্বান জানানো হয়।

    কিন্তু, ই-মেইলে উত্তর জানাতে গিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নজরে আসে অভিযোগকারী ও তার মেল আইডি সম্পূর্ণ ভুয়ো। অশোকবাবু বলেন, প্রথমে বুঝতে পারিনি এটি ভুয়ো। তাই বিষয়টিকে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই দেখেছি। কারণ, অভিযোগগুলি শিক্ষামন্ত্রক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পেশ করা হয়েছিল। এমনকী এই নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও জলঘোলা হচ্ছিল। তবে মজার বিষয়, অভিযোগকারীর কাছ থেকে সরাসরি এই অভিযোগ পাইনি। তা পেয়েছিলাম ইউজিসি থেকে। যে দপ্তরগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদেরও বক্তব্য চেয়ে পাঠাই। প্রথমত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বা গভর্মেন্ট ই-মার্কেটের কোনও বিলের জন্য কর্মসচিবকে সই করতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিসপত্র কেনার জন্য ভুয়ো বিল করার যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে অভিযোগকারীকে প্রমাণ সহ দপ্তরগুলিতে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি জমি কখনই বিক্রয়যোগ্য নয়। তাই এই অভিযোগও অত্যন্ত হাস্যকর। তবে, ইউজিসির নির্দেশ মোতাবেক সমস্ত উত্তর লিপিবদ্ধ করে অভিযোগকারীকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রথম মেইলটি যাওয়ার পরেই আইডিটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোনও মেইল ডেলিভারি হচ্ছিল না। এরপরেই আমাদের সন্দেহ হয়, এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো ই-মেইল আইডি থেকে করা হয়েছে। আমাদের অনুমান, যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ভিতরের কেউ। তাঁর উদ্দেশ্য কী তা জানা না গেলেও তিনি বিশ্বভারতীর সম্মানহানি করছেন, তা স্পষ্ট। তাই বিষয়টিকে মোটেই হাল্কা ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শীঘ্রই শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত থাকলে এই সম্মানহানির জন্য কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)