• ‘দেবশিশু’র শ্যুটিং-স্মৃতি আজও টাটকা দ্বারবাসিনীতে, পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর আকস্মিক প্রয়াণে বিষাদে বাসিন্দারা
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ভোরবেলা সিউড়ির সার্কিট হাউস থেকে হাঁটতে হাঁটতে সোজা বাজারে। সেখান থেকে টুথব্রাশ ও পেস্ট কিনে ফের সার্কিট হাউসে ফেরা। রাস্তায় তখন লোকজন কম। কিন্তু ওইটুকু সময়েই মানুষ চিনে ফেলেছেন তাঁকে, এ তো ওম পুরী! ধীরে ধীরে খবর ছড়িয়ে পড়ল। শুধু ওম পুরীই নন, এসেছেন স্মিতা পাতিলও। চারিদিক থেকে পিলপিল করে লোক এসে পড়ল। অতি উৎসাহীরা স্মিতা পাতিলকে দেখতে উঠে পড়ল সার্কিট হাউসের পাঁচিলে। সেদিনের কথা বলতে বলতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল স্থানীয় বাসিন্দা বিপত্তারণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গত মঙ্গলবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন অন্যধারার চলচ্চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। তাঁর ছবি ‘দেবশিশু’-র শ্যুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করছিলেন বিপত্তারণবাবু। মহম্মদবাজারের দ্বারবাসিনী গ্রামে টানা ১৫ দিন শ্যুটিং হয়েছিল ছবিটির। ওম পুরী, স্মিতা পাতিলের সঙ্গে রোহিনী হাত্তাঙ্গাদি, সাধু মেহেররাও এসেছিলেন এখানে। বীরভূমের প্রতি উৎপলেন্দুর এক অদ্ভুত টান ছিল। শুধু দেবশিশুই নয়, ‘ময়নাতদন্ত’ ছবিরও শ্যুটিং হয়েছিল বীরভূমে। 

    বর্তমান প্রজন্ম শক্তিশালী পরিচালক উৎপলেন্দুকে মনে না রাখলেও বীরভূমের প্রবীণ বাসিন্দারা তাঁর কথা বিলক্ষণ মনে রেখেছেন। ১৯৮০ সালে ‘ময়নাতদন্ত’ ছবির জন্য সেরা ডেবিউ পরিচালক হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার পেয়েছিলেন উৎপলেন্দু। মঙ্গলবার ৭৬ বছর বয়সেই নিভে গেল উৎপলেন্দুর জীবন প্রদীপ। ময়নাতদন্ত ছবির একটি দৃশ্যেরও শ্যুটিং হয়েছিল দুবরাজপুরের মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের কোলে একটি গ্রামে। সিউড়ি জেলখানাতেও সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার একটি দৃশ্য গৃহীত হয়েছিল। ‘দেবশিশু’ ছবির অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে মহম্মদবাজার ব্লকের হিংলোর দ্বারবাসিনী। মূলত, দুর্গামন্দিরকে কেন্দ্র করে এখানে বহু মানুষের ভিড় জমে। পাথর, নদী, জঙ্গল ঘেরা এইখানেই দেবশিশু ছবির শ্যুটিং হয়েছিল। সেই শ্যুটিং দেখতে দ্বারবাসিনীতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। সবাই একবার চোখের দেখা দেখতে চান স্মিতাকে। সে কী ভিড়! বিপত্তারণবাবুর মতো অনেকের স্মৃতিতেই আজও উজ্জ্বল সেই দিনগুলি। তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় বাসিন্দা কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সে সময়ে আমরা একেবারে ছোট। শুধু মনে আছে, নায়িকা বসে চুল আঁচড়াচ্ছে দ্বারবাসিনীতে। অনেক বয়স্ক মানুষ এখনও সেকথা বলেন। সেই ছবির পরিচালক মারা গেলেন শুনে খারাপ লাগছে!

    এক শারীরিক ভাবে বিকৃত সন্তান জন্মানোয় গ্রামীণ সমাজজীবনে যে কী প্রভাব পড়ে তারই গল্প ছবিটি। দীর্ঘদিন আদিবাসীদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে বীরভূমের সঙ্গে আত্মিক যোগ ছিল উৎপলেন্দুর। লালমাটির জেলার অপরূপ সব জায়গাকে স্থান দেন নিজের সিনেমাতে। এই নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল অধ্যাপক পার্থশঙ্খ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, বাবার মুখে শুনেছিলাম উৎপলেন্দুর সিনেমার কথা। দেবশিশু ও ময়নাতদন্ত এই দুই ছবির সঙ্গে বীরভূমের সরাসরি যোগ ছিল। জেলখানা গেটে তাঁকে দেখেছিলাম আমি নিজেও। তাঁর মৃত্যুতে সংস্কৃতি মহল শোকাহত।
  • Link to this news (বর্তমান)