• স্কুলের প্রদর্শনীতে ঠাঁই পরাধীন ভারতে প্রথম অস্ত্র আইনে সাজাপ্রাপ্ত বিপ্লবী দুকড়িবালাদেবীর
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ‘বর্তমান’-এর খবরের জের। এবারই প্রথম স্কুলের প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেলেন পরাধীন ভারতের প্রথম অস্ত্র আইনে সাজাপ্রাপ্ত মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী দুকড়িবালা দেবী। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে রামপুরহাটের কুসুম্বা হাইস্কুলে আয়োজিত প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়ায় খুশি বিপ্লবীর নাতি পার্থসারথী চক্রবর্তী সহ গ্রামের বাসিন্দারা। 

    নলহাটির ব্রাহ্মণী নদীর তীরে প্রত্যন্ত ঝাউপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন দুকড়িবালা দেবী। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বোনপো রানিগঞ্জের সিয়ারসোল গ্রামের নিবারণচন্দ্র ঘটক সরাসরি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বোনপোর সঙ্গে জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ, বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিপ্লবীদের কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনিও নেমে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে। দুকড়িবালাদেবী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে মাসিমা নামে পরিচিত ছিলেন। স্বদেশী আন্দোলনকারীরা গোপন ডেরা হিসেবে মাসিমার বাড়িই বেছে নিয়েছিলেন। ১৯১৪ সালের ২৪ অক্টোবর একটি কোম্পানির মাওজার পিস্তল ও গোলাবারুদ লুট হয়। যার মধ্যে সাতটি মাওজার পিস্তল ও দুই বাক্স ভর্তি গুলি দুকড়িবালা দেবী নিজের বাড়ির উঠনে খড়ের গাদায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে ১৯১৭ সালের ৭ জানুয়ারি মাসিমার বাড়িতে হানা দেয় ব্রিটিশ পুলিস। গ্রেপ্তার করা হয় দুকড়িবালা দেবীকে। কোলের শিশুকে বাড়িতে রেখে জেলে যান তিনি। জেলে তাঁর উপর অনেক অত্যাচার করা হয়। প্রেসিডেন্সি জেলে প্রথম ও একমাত্র বিনা বিচারে আটক রাজবন্দিনী ননীবালা দেবীর সংস্পর্শে আসেন। দু’বছর কারাদণ্ডের পর দুকড়িবালাদেবী মুক্তি পান। 

    এহেন বীরভূমের অগ্নিকন্যা দুকড়িবালা দেবীর নাম অনেকেই জানে না। প্রতিবছর প্রশাসনের উদ্যোগে ঘটা করে স্বাধীনতা দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু তাতে স্থান মেলেনি দুকড়িবালা দেবীর। নতুন প্রজন্মের সামনে তাঁর সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা বা যোগ্য সম্মান না জানানোয় আক্ষেপ ছিল পরিবারের। গত ১৫ আগস্ট দুকড়িবালার সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ পায় ‘বর্তমান’-এ।

    অবশেষে টনক নড়ে প্রশাসনের। ৭৮ তম স্বাধীনতা বর্ষ উপলক্ষ্যে বুধবার থেকে রামপুরহাট মহকুমা তথ্য‌ ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কুসুম্বা হাইস্কুলে শনিবার পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত বহু সংগ্রামী দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের আত্মত্যাগ সম্বলিত তথ্য ও ছবি প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বিভিন্ন বিপ্লবীদের পাশাপাশি এবারই প্রথম স্থান পেয়েছেন নারী বিপ্লবী দুকড়িবালা ও ননীবালা দেবী।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ মণ্ডল বলেন, প্রদর্শনীতে নানা বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যাদের মধ্যে এই জেলারই দুকড়িবালা দেবীর সম্পর্কে সেভাবে জানা ছিল না। এদিন ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি আমরাও তাঁর অবদানের কথা জানলাম।

    দুকড়িবালা দেবীর নাতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনওদিনই ঠাকুমাকে যোগ্য সম্মান জানানো হয়নি। বর্তমান সংবাদোত্রে তাঁর অবদানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর এবারই প্রথম প্রশাসনিক প্রদর্শনীতে ঠাকুমা স্থান পেয়েছেন। এতে আমরা খুশি।  মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক আসাদুজ্জামান জিয়া বলেন, ‌পড়ুয়াদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে জানানো ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধির জন্য এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)