• গুণধর বাবাকে যাবজ্জীবন জেলের নির্দেশ আদালতের
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তান হওয়ায় ১৬দিনের মেয়েকে কুয়োয় ফেলে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের দায়ে বুধবার বাঁকুড়া জেলা আদালত গুণধর বাবাকে যাবজ্জীবন কারাবাসে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এদিন বাঁকুড়ার জেলা ও দায়রা বিচারক মনোজ্যোতি ভট্টাচার্য ওই সাজা শুনিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত যুবকের নাম অসিনাথ সোরেন। তার বাড়ি ছাতনা থানার তুলসা গ্রামে। বিচারক এদিন অসিনাথকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের হাজতবাসের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া খুনের প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে তাকে পাঁচ বছরের কারাবাস ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে তিন মাসের সাজা খাটতে হবে। 

    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ছ’বছর আগে অসিনাথের সঙ্গে পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার ভাতুইকেন্দ গ্রামের বাসিন্দা সোহাগী টুডুর বিয়ে হয়। বিয়ের দু’বছরের মাথায় সোহাগী প্রথম কন্যাসন্তান প্রসব করেন। তার আড়াই বছর পর ফের তিনি দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। দ্বিতীয়বার মেয়ে হওয়ায় অসিনাথ রেগে যায়। প্রসবের ১৬ দিনের মাথায় বড় মেয়েকে নিয়ে সোহাগী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে যান। তিনি ছোট মেয়েকে অসিনাথের কাছে রেখে যান। বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে অসিনাথকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। অসিনাথ সদুত্তর দিতে না পারায় সোহাগী চিৎকার শুরু করেন। তখন তাঁকে একটি ঘরে তালবন্ধ করে রাখা হয়। সপ্তাহখানেক পর বাপের বাড়ির লোকজন জানতে পেরে বড় মেয়ে সহ সোহাগীকে উদ্ধার করে কাশীপুরে নিয়ে যায়। পরে স্বামীর বিরুদ্ধে সোহাগী ছাতনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিস অসিনাথকে গ্রেপ্তার করে।

    মামলার সরকারি আইনজীবী রথীনকুমার দে বলেন, অসিনাথ পুলিসের জেরায় মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করে। ঘটনার দিন সোহাগী বাড়ির বাইরে যেতেই সে ছোট মেয়েকে বাড়ি সংলগ্ন একটি কুয়োয় ফেলে দেয়। পরে দেহ ভেসে ওঠায় তা থেকে গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ওইসময় সে দেহ নিয়ে পাশের গ্রামের মাঠে গিয়ে পুঁতে দেয়। পুলিস তার দেখানো জায়গায় মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ধৃতকে হেফাজতে রেখেই মামলার শুনানি হয়েছে। ১৬জনের সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিচারক এদিন দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।

    সাজাপ্রাপ্ত যুবকের স্ত্রী তথা মৃত শিশুকন্যার মা সোহাগীদেবী এদিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ার পর থেকেই স্বামীর গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। দ্বিতীয়বার ফের কন্যাসন্তান হওয়ায় অত্যাচার চরমে ওঠে। তবে এভাবে স্বামী সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে কুয়োর জলে ফেলে খুন করবে, তা ভাবতে পারিনি। স্বামীর কাছে মেয়েকে রেখে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখতে পাইনি। ঘটনার পর যাতে পুলিসের কাছে অভিযোগ জানাতে না পারি, তার জন্য আমাকে বেশ কয়েকদিন তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল। স্বামীর পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও হুমকি দিয়েছিল। তবে আমি ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে অবিচল ছিলাম। স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পেয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)