• নদীয়ার প্রাচীন রুদ্রেশ্বর শিবমন্দিরের সংস্কার দাবি
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণগঞ্জে রাঘব রায় প্রতিষ্ঠিত রুদ্রেশ্বর মন্দির দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। জেলার প্রাচীন শিবমন্দিরগুলির অন্যতম রুদ্রেশ্বর মন্দিরের সংস্কারের দাবি তুলল স্থানীয়রা। এই মন্দিরে কষ্টিপাথরের দুষ্প্রাপ্য  শিবলিঙ্গ  রয়েছে। ৩৫৯ বছরের  পুরনো এই মন্দিরের দেওয়ালের ফাঁক ফোকড়ে বেড়ে উঠেছে অশ্বত্থ গাছ। মন্দিরের গায়ে থাকা একাধিক পোড়ামাটির কাজ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। এই শিবমন্দিরের সংস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, নদীয়ায় মাটিয়ারি এক সময়ে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল। গ্রামটি উঁচু মাটির ঢিপির উপর আছে বলেই মাটিয়ারি নাম বলে জানা যায়। ১৬০৫ সালে নদীয়ার এই মাটিয়ারি গ্রামেই ভবানন্দ মজুমদার নদীয়া রাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানেই তিনি তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ভবানন্দ মজুমদারের সময়কালে মাটিয়ারি গ্রামে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ছিল। মাটিয়ারির কাঁটাতারের ওপারে আছে বাংলাদেশের চুয়াডাঙা জেলার গয়েশপুর, রাজাপুর, ধোপাখালি, জীবননগরের মতো একাধিক গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা নদী, চূর্ণী ও ইছামতী।  মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের সময় থেকেই কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাটিয়ারি গ্রামের শ্রীবৄদ্ধি ঘটেছিল। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাটিয়ারি নদীয়ার অন্যতম প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ গ্রামও।

    এই মাটিয়ারি গ্রামেই ভবানন্দ মজুমদারের প্রপৌত্র মহারাজা রাঘব রায় ১৬৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁর পুত্র রুদ্র রায়ের নামে ‘রুদ্রেশ্বর’ শিবমন্দির। দক্ষিণমুখী চারচালা বিশিষ্ট পোড়ামাটির অপরূপ ভাস্কর্যমণ্ডিত শিবমন্দিরটি জেলার অন্যতম প্রাচীন শিবমন্দির বলে মনে করা হয়। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ৫.৪ মিটার। প্রস্থ সাড়ে ৩ মিটার হবে। উচ্চতায় মন্দিরটি প্রায় ৭.৬ মিটার। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ আছে। সামনে ও দু’ পাশ নিয়ে মন্দিরে প্রবেশের তিনটি দরজা আছে। এর আগে সংস্কারের নামে মন্দিরে অপটু হাতে বেমানান রং করা হয়। মন্দিরের গর্ভে কালো মার্বেল পাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে। রুদ্রেশ্বর মন্দিরের শিবলিঙ্গকে নিত্যপুজো করা হয়। এখানে শিবরাত্রি, নীল, চড়ক থেকে নানা অনুষ্ঠান হয়। এই মন্দিরের গায়ে থাকা পোড়ামাটির মূর্তির মধ্যে নৌকাবিলাস, গোপিনীদের বস্ত্রহরণ, কৃষ্ণলীলা, অশ্বারুঢ় যোদ্ধা, হাতির পিঠে মোঘল যোদ্ধাদের ফলকগুলি আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। তবে এগুলি আজ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে  নষ্ট হওয়ার উপক্রম। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত প্রামাণিক বলেন, এই মন্দিরের নাম ছোট থেকে শুনে আসছি। দেখে আসছি। এখানে বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। তাঁরা মানত করেন। পুজো দেন। আমরা চাই মন্দিরটির সংস্কার করা হোক। স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য, এই গ্রামে ভবানন্দ মজুমদারের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যপাটের আর কিছুই নেই। শুধুমাত্র থেকে গিয়েছে  মন্দিরটি। সেই মন্দির সংস্কার না করা হলে আগামী দিনে মন্দিরও হয়ত থাকবে না। জেলা পরিষদের শিক্ষা সংস্কৃতি ক্রীড়া কর্মাধ্যক্ষ কার্তিক মণ্ডল বলেন, আমরা এই রুদ্রেশ্বর মন্দির নিয়ে উদ্বেগে। মন্দিরটি সংস্কার করার দরকার আছে।  না হলে এই প্রজন্ম জানতেই পারবে না এই মন্দির সম্বন্ধে। মন্দিরের সংস্কার করার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করব। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)