• পাহাড়ে লাগাতার ধসে আট ফুট উঁচু তিস্তাবক্ষ
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পাহাড়ে লাগাতার ধস। আর তারই জেরে নদীতে গড়িয়ে এসে পড়ছে বড় বড় বোল্ডার, কাদা-মাটি। ফলে উঁচু হয়ে যাচ্ছে তিস্তাবক্ষ। সেচদপ্তরের সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। দেখা যাচ্ছে, সেভকের পর থেকে তিস্তার তলদেশ কোথাও পাঁচ ফুট, কোথাও আবার আট ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেচদপ্তরের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, গতবছর সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের পর থেকে ঘন ঘন গতিপথ বদলাচ্ছে খরস্রোতা তিস্তা। কখনও বাঁদিকে বাঁক নিচ্ছে নদী, আবার কখনও ডানদিকে। 

    সেচদপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, আগে যেখানে দেখা যেত দীর্ঘবছর পর তিস্তার মূল জলধারা গতিপথ বদলায়, সেখানে গতবছর সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের পর থেকে দেখা যাচ্ছে তিস্তা যেন কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে। নদী একবার ডানদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার বাঁদিকে এগচ্ছে। যা ভাবাচ্ছে দপ্তরকে। সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, তিস্তার মূল জলধারা যেভাবে বাঁক নিচ্ছে, তাতে ভারী বৃষ্টি হলে কিংবা প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হলে নদীপাড়ের অনেক গ্রামই তলিয়ে যেতে পারে। আমরা আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু, নদীর তলদেশ যেভাবে উঁচু হচ্ছে তাতে বিপদের যথেষ্ট আশঙ্কা আছে। 

    সেচদপ্তর সূত্রে খবর, সেভকের কাছেই গতিপথ বদলে তিস্তা চলে এসেছে ডানদিকে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে লালটং বস্তি। আবার চ্যাংমারিতে তিস্তা বাঁদিকে বাঁক নিয়েছে। ফলে সেখানেও বিপন্ন জনপদ। গজলডোবার কাছে তিস্তা ডানদিকে ঘুরে যাওয়ায় বিপদের আশঙ্কায় দিন গুনছেন মিলনপল্লির বাসিন্দারা। ময়নাগুড়িতে তিস্তা বাঁদিকে বাঁক নেওয়ায় বিপদের মুখে পড়েছে বাকালি গ্রাম। চ্যাংমারিতে তিস্তা ইতিমধ্যেই চারটি স্পার ভাঙতে শুরু করেছে। বাকালিতেও খরস্রোতা এই নদীর গ্রাসে চারটি স্পার। 

    সেচদপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, স্পার ভাঙতে পারলেই তিস্তা বাঁধের উপর আছড়ে পড়বে। আর বাঁধ ভাঙলে হু হু করে জল ঢুকবে গ্রামে। সেক্ষেত্রে তলিয়ে যেতে পারে বহু এলাকা। এই আশঙ্কা রুখতে তাঁরা বাঁধ সংস্কারে জোর দিয়েছে। কিন্তু, ড্রেজিং করে তিস্তার নাব্যতা বাড়াতে না পারলে আখেরে লাভ হবে না। 

    চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, যেখানে ভারী বৃষ্টি না হলে জল ঢোকে না, এবার সেখানে ১ জুন তিস্তার জল ঢুকে গিয়েছিল। এখনও সেই জল নামেনি। এতেই বোঝা যায়, পরিস্থিতি কী। সিকিম বিপর্যয়, পাহাড়ে লাগাতার ধসে তিস্তার বুকে পলি ভরে গিয়েছে। তাই ড্রেজিং দরকার। তিস্তায় ড্রেজিংয়ের জন্য আমরা ৫৫০ কোটি টাকার একটি খসড়া প্রস্তাব রাজ্যে পাঠিয়েছি। সেটি স্ক্রুটিনি করে দেখা হবে। তবে শুধু তিস্তা নয়, ভুটান থেকে নেমে আসা নদীগুলিরও অবস্থা খারাপ। সেগুলিও প্রচুর পরিমাণে পাথর বয়ে এনে নীচে ফেলছে। যোগীখোলা, হাসিমারা ঝোরার মতো নদী পাশের গ্রামের থেকে অন্তত ২০ ফুট উঁচু দিয়ে বইছে।  জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর বর্তমান অবস্থা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)