• বিডিও পরিচয় দিয়ে প্রধানকে ভুয়ো ফোন
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: প্রতারণা চক্রের নয়া ফাঁদ উত্তরবঙ্গে। বিডিও কিংবা জয়েন্ট বিডিও’র নাম ভাঙিয়ে ফোন করা হচ্ছে প্রধান ও উপপ্রধানদের। অভিযোগ, ফোনে টাকার বিনিময়ে চাকরির টোপ! অভিযোগ, ইতিমধ্যেই নাকি টোপ গিলেছেন এক উপপ্রধান। তিনি লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ। এর নেপথ্যে জামতারা গ্যাং বলেই পুলিস ও গোয়েন্দাদের প্রাথমিক সন্দেহ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা নিয়ে প্রধান ও উপপ্রধানদের সতর্ক করেছে প্রশাসন। 

    এবার প্রতারকদের নিশানায় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানরা। যাদের একাংশই মহিলা। তাঁদেরকে ফোনে চাকরির টোপ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাটিগাড়া ব্লকের একাধিক প্রধান ও উপপ্রধান এ ধরনের ফোন পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাটিগাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রেখা মল্লিক অন্যতম। তিনি বলেন, গত ১৮ তারিখ রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। জয়েন্ট বিডিও’র নাম করে ফোনে জানানো হয়, পঞ্চায়েতে লোক নিয়োগের দু’টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। চাকরিপ্রার্থী থাকলে দ্রুত নথিপত্র জমা দিত বলা হয়। সঙ্গে অনলাইনে প্রার্থী প্রতি ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। 

    একই ধরনের ফোন পান মাটিগাড়া-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবন বিশ্বাস। তিনি বলেন, জয়েন্ট বিডিও’র নাম করে ফোন করা হয়। প্রথমেই বলা হয় মেইল দেখেননি? না বলার পর জানানো হয়, পঞ্চায়েতে দু’জন লোক নিয়োগ করতে পারবেন। এজন্য নথি সহ প্রার্থী পিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনলাইনে পাঠান। সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে জয়েন্ট বিডিও’র সঙ্গে যোগাযোগ করে বুঝতে পারি ফোনটি প্রতারণা চক্র করেছিল। 

    শুধু তাঁরা দু’জন নয়, এমন ফোন কল আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সন্তু দাস, মাটিগাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণ সরকার সহ বেশ কয়েকজন পেয়েছেন। এমনকী, কয়েকজন ধারাবাহিকভাবে এমন কল পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এক উপপ্রধান ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে খবর। এনিয়ে প্রধান ও উপপ্রধানরা ঘাবড়ে গিয়েছেন। তাঁদের কয়েকজন বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের জানিয়েছেন। 

    ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে মাটিগাড়া ব্লক প্রশাসন। বুধবার তারা ব্লকের সমস্ত প্রধান ও উপপ্রধানকে নিয়ে বৈঠক করে। তাঁদেরকে ওই প্রতারণা চক্র সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। মাটিগাড়ার বিডিও বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে সাবধান করেছি। কেউ যাতে কোনও প্রতারণার ফাঁদে পা না দেন সেই বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিসের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানাব। প্রধান ও উপপ্রধানদের থানায় অভিযোগ করতে বলেছি।

    দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণা চক্র সক্রিয়। অতীতে বিভিন্ন সময় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্ট নম্বর, এটিএম কার্ড প্রভৃতির তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা করা হতো। এরপর সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন এজেন্সির নাম করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে বিদ্যুতের বিল মেটানোর এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতানো হয়েছে। ঋণ প্রদানের নামেও হয়েছে প্রতারণা। এবার লোক নিয়োগের টোপ দিয়ে প্রধান ও উপপ্রধানদের প্রতারণার ছক। ঘটনাটি নিয়ে পুলিসের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অফিসারদের ধারণা, অনলাইন প্রতারণার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে জামতারা গ্যাং জড়িত। এবারের ঘটনার সঙ্গেও সেই গ্যাং রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।   নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)