• শুধুই রাজনীতি! হতাশ আম জনতা
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঝনঝনিয়ে গিটার বাজছে। উচ্চস্বরে গান হচ্ছে ‘ও গঙ্গা তুমি বইছ কেন?’ মঞ্চ আলো করে বসে বিজেপির ছোট-বড়-মেজো-সেজো নেতানেত্রীরা। গান শেষে মাইক ধরলেন রুদ্রনীল ঘোষ। জানিয়ে দিলেন আগামী কর্মসূচি। আবার গান... এবার ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা’। মঞ্চের নীচে হাতেগোনা লোকজন ছবি, সেলফি তুলছেন। কেউ আবার মধ্যাহ্নভোজের লাইনে দাঁড়াবেন বলে দৌড়চ্ছেন। ঢালাও ভোজ চলছে। আর জি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে বুধবার শ্যামবাজারে বিজেপির অবস্থান মঞ্চের চিত্রটা ছিল এমনই। রীতিমতো উৎসবের মেজাজ। সহপাঠী, সহকর্মী, সহ নাগরিকের খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে যেভাবে ছাত্র-নাগরিক সমাজ পথে নেমেছিল, সেই ছবি উধাও। তার জায়গা নিয়েছে শুধুই রাজনীতি। এতে বিরক্ত আম জনতা। ‘ছাত্রদের আন্দোলনে কেন রাজনীতির নোংরা খেলা?’ হতাশা ঝরে পড়ছে তাদের গলায়।

    শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণমুখী রাস্তা বন্ধ। বাসগুলি আর জি কর ব্রিজ থেকে বাঁদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক পুলিস আধিকারিক বললেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এমনই চলবে।’ শুনেই রেগে গেলেন আর জি করে এক রোগীকে নিয়ে আসা উল্টোডাঙার বাসিন্দা স্বপন তালুকদার, ‘এভাবে বিচার পাওয়া যায়? রাজনীতি করছে ওরা। আম জনতার পেটেই লাথি মারা হচ্ছে। ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন আছে। কিন্তু ওরা এসব কী শুরু করেছে?’ একই সুর স্থানীয় ব্যবসায়ী মনোজ সেনের গলাতেও। তাঁর সাফ কথা, ‘দলগুলো রাজনীতি করতে নেমেছে। এইসব নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। রাজনীতি ঢুকে গেলে সব ওলটপালট হয়ে যায়।’ নিরন্তর আন্দোলনের চক্করে শ্যামবাজার সংলগ্ন ছোট দোকানিদের পেটেও লাথি পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষগুলো চাইছেন, এবার এসব বন্ধ হোক। আর জি করের পাশেই আফসানা পারভিনের দোকান। হাসপাতালের কাজে লাগে এমন সামগ্রী বিক্রি করেন তিনি। বলছিলেন, ‘সকলে দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছে। রোগীই আসছেন না। আগে দিনে দু’তিন হাজারের ব্যবসা হতো। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি হচ্ছে না।’ সামনেই ‘সুবিচার চাই’ লেখা পোস্টার। উদাস ভঙ্গিতে সেদিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন আফসানা। বললেন, ‘আমরা তো কিছু হলেই এই হাসপাতালে যাই। বাচ্চাগুলোকে বলছি, বেশি দৌড়ঝাঁপ করিস না, লেগে গেলে এখন কোথাও যাওয়ার নেই।’ একই অবস্থা হাসপাতালের ভিতরে থাকা স্টলগুলোর। ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলছিলেন, ‘৯০ শতাংশ ব্যবসা কমে গিয়েছে। এবার পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়া দরকার। আমাদের পেটে টান পড়ে যাচ্ছে।’

    কতদিন চলবে বিজেপির এই অবস্থান বিক্ষোভ? দলের এক কর্মী বললেন, ‘বড়রা বলেছেন, পাঁচ দিন।’ রাস্তায় বসে পোস্টার লেখা চলছে। সেই পোস্টারে ‘নৃশংস’ বানান অবলীলায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘নৃশিংষ’। মঞ্চের পিছনে বিশালাকার এলইডি। সেখানে ফুটে উঠছে বৃহস্পতিবারের স্বাস্থ্যভবন ঘেরাও অভিযান কর্মসূচি, বিভিন্ন দাবি, স্লোগান। চারদিকে তাঁবু খাটানো। পাশের গলিতে লাইন দিয়ে চলছে মাছ-ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়া। শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণগামী এই রাস্তা জুড়ে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিক্রি। এদিন দুপুর থেকে মঞ্চে হাজির সুকান্ত মজুমদার, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ সহ আরও অনেকে। মঞ্চ ঘিরে শুধুই গাড়ির মেলা আর নেতাদের নিরাপত্তায় মোতায়েন আধাসেনার ভিড়। তার জেরে ছোট হয়ে এসেছে ফুটপাতও। 
  • Link to this news (বর্তমান)