• ‘কেন্দ্র পদ্মশ্রী দিয়েছে, একটা বাড়ি দিতে পারত!’ ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরে বসেই আক্ষেপ পুরুলিয়ার ‘গাছদাদু’র
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, বাঘমুন্ডি: পদ্মশ্রী সন্মান মিলেছে। কিন্তু আজও দুঃখ ঘোচেনি পুরুলিয়ার ‘গাছদাদু’ দুখু মাঝির! দরমার বেড়া দেওয়া ঘর। ত্রিপলের ছাউনি। পুরনো সেই ছাউনি ভেদ করে এই বর্ষায় জল পড়ে ঘরের ভিতর। ভেসে যায় অপরিসর উঠোন। কোথায় রাখবেন পদ্মশ্রী স্মারক? ভেবে কুল পান না দুখু। একটা বাড়ির জন্য কার কাছে না দরবার করেছেন! প্রতিবার মিলেছে শুধু আশ্বাস। ঘর মেলেনি দুখুর। আক্ষেপ করে বললেন, ‘কেন্দ্র আমাকে পদ্মশ্রী দিয়েছে, একটা বাড়ি তো দিতেই পারত!’

    পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের ‘মুখোশ গ্রাম’ চড়িদা। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সিন্দরি গ্রামে বাড়ি দুখুর। এলাকার সবার কাছে তাঁর পরিচয় ‘গাছদাদু’। সেই ১২ বছর বয়সে কোনও এক সাহেবের থেকে তিনি শুনেছিলেন, গাছ অক্সিজেন দেয়। গাছ লাগালে সভ্যতা বেঁচে থাকবে। গরমের হাত থেকে পৃথিবী রক্ষা পাবে। পাখিরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। কিশোর বয়সেই কথাগুলো মাথায় গেঁথে গিয়েছিল দুখুর। সেই শুরু। এখনও প্রতিদিন সকাল হলে সাইকেলে গাছের চারা, কোদাল, গাঁইতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। একটা-দু’টো করে চারা রোপণ করতে করতে আজ ৮০ বছর বয়সে এসে গোটা বাঘমুন্ডিকে সবুজ করে তুলেছেন তিনি। এ বছরও প্রায় ১০ হাজার চারাগাছ লাগিয়েছেন তিনি। পরিবেশ রক্ষায় তাঁর এই জানকবুল লড়াইয়ের কাহিনি পুরুলিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল সুদূর দিল্লি। তাঁর কাজকে স্বীকৃতি জানিয়ে এ বছরই তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান তুলে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। 

    শুধু গাছ লাগানোই নয়, কোন গাছ লাগালে বেড়া দিতে হবে, কোন গাছ বসালে গোরু, ছাগলে মুখ দেবে না—এরকম নানা দরকারি তথ্য প্রচার করে বেড়ান দুখু। তাঁর কথায়, ‘সবাই তো গাছ কাটে। তার বিনিময়ে গাছ লাগায় ক’জন? গাছ না লাগালে কি এই পৃথিবী বাঁচবে?’ এভাবে সারা পৃথিবীকে বাঁচানোর দায়িত্ব যিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাঁর কীভাবে দিন গুজরান হয়, সেই খোঁজ কি কেউ রাখেন? দুখু বললেন, ‘পদ্মশ্রী পাওয়ার কথা ঘোষণা হতে অনেকে খোঁজ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন মঞ্চে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল। তারপর যা হয়!’ 

    বর্তমানে স্ত্রী ও বিশেষভাবে সক্ষম এক ছেলেকে নিয়ে দুখুর বড় অভাবের সংসার। স্বামী-স্ত্রীর বার্ধক্য ভাতার টাকায় কোনওরকমে সংসার চলে। প্রায় প্রতিদিন শাকের চচ্চড়ি আর ফ্যানাভাতে মেটে পেটের খিদে। কুঁড়েঘরে ছিল না বিদ্যুতের সংযোগও। ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার পর সেই ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি আজও মেলেনি। বাঘমুন্ডির বিডিও আর্য তা বলেন, ‘সত্যিই উনি খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আবাসের উপভোক্তা তালিকায় নাম রয়েছে দুখুবাবুর। কিন্তু কেন্দ্র এখনও সেই টাকা দেয়নি। আমরা যে উদ্যোগ নিয়ে ওঁকে একটা বাড়ি করে দেব, জমিজটের কারণে তাও সম্ভব হচ্ছে না।’ তাহলে কি এ জীবনে আর দুঃখ ঘুচবে না দুখুর? উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে!
  • Link to this news (বর্তমান)