• সাবেক ফরাসডাঙার আলো নিভল, বিদায় ‘আলো-সম্রাট’ বাবুর
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: চীন তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল আলোর উদ্ভাবন দেখাতে। করোনা পর্বের কয়েক বছর আগের ঘটনা। চন্দননগরের আলোকশিল্পী এলইডি আলোর বিশ্বব্যাপী বাজারে গিয়েছিলেন এদেশের হর্তাকর্তা হয়ে। সাবেক ফরাসি কলোনি ফরাসডাঙা থেকে চীনে যাওয়া সেই আলোকশিল্পীর নাম বাবু পাল। বুধবার সকালে তখনও মরদেহ আসেনি পঞ্চাননতলার বাড়িতে। ইতিউতি সজল চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গুণমুগ্ধরা, তাঁর স্টুডিও’র কর্মীরা। আর উঠে আসছে ইতিহাস। উঠে আসছে প্রথাগত আলোকশিক্ষা ছাড়া শুধু সৃষ্টিশীলতার মেধায় এক সাধারণ যুবকের আলোকশিল্পের ‘জাদুকর’ হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত।

    শুধু চীন কেন, ২০১৮ সালে জিম্বাবোয়ে থেকে ডাক এসেছিল তাঁর। রাজধানী হারারের একটি পার্ককে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তুলতে প্রাণপাত করেছিলেন চন্দননগরের নাগরিক বাবু পাল। সেই পার্কে আজও সন্ধ্যা নামলেই জ্বলে ওঠে তাঁর হাতে তৈরি বর্ণময় আলো। শুধু নিভে গেল তাঁর জীবনআলোক। মঙ্গলবার রাতে যখন চন্দননগরে খবর আসে, তখনই বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন আলোকশিল্পী থেকে গুণমুগ্ধরা। গত তিনবছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। ভবিতব্য জানতেন পরিবার থেকে আলোকশিল্পীরা। তবুও মঙ্গলবার রাতে গঙ্গাপাড়ের আলোকনগরীতে নেমে এসেছিল অদৃশ্য অন্ধকার। কারণটা আর কিছুই নয়, কর্মের মহিমায় সাধারণের সরণি থেকে নিজেকে এক অনবদ্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবু পাল। হাতিয়ার ছিল নতুন প্রজন্মের আলো। তাঁর খ্যাতির তালিকায় রয়ে গিয়েছে অনেক কিছুই। অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি আলোকমালায় সাজিয়ে দেওয়া বা দুবাইয়ের আলো উৎসবে যাওয়া, প্রতিবছর দেশ থেকে রাজ্যের একাধিক বিগবাজেটের পুজোয় নতুন আলোকসম্ভারে চমকে দিতেন বাবু। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলছেন, সবই আলোর খেলা, তবুও সেখানে লুকিয়ে থাকত একটি বিশেষ ছোঁয়া, সেখানেই অনবদ্য বাবু পাল। আর দশজনের থেকে পৃথক সরণির বাসিন্দা তিনি। সামনেই দুর্গাপুজো, তারপরেই শিল্পীর জন্মভূমিতে জগদ্ধাত্রী পুজো আলোকমালা ছড়ানোর ডাক দেবে। সবই থাকবে শুধু থাকবেন না অনন্য চিন্তার কারিগর এক অসামান্য শিল্পী। এদিন শিল্পীর পার্থিব শরীরকে সম্মান জানাতে এসেছিলেন মেয়র রাম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, চন্দননগর এক সম্পদকে হারাল। আলোর শহরে আজ অন্ধকার লাগছে। ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন চন্দননগরের আলোক শিল্পের পথপ্রদর্শক প্রবীণ শ্রীধর দাস। তিনি বলেন, ভিন্ন রকমের প্রতিভা ছিল। চন্দননগরের আলোকে বিশ্ববাজারে বিপণনযোগ্য করেছিল বাবু। শিল্প আর অর্থনীতির যথার্থ মেলবন্ধন হয়েছিল ওর হাতে।

    ছোটখাট মানুষ। ছিলেন সাধাসিধে, ছিল স্বপ্নালু চোখ। কর্মী দরদি বাবুর বড় দরদ ছিল কাজের প্রতি। গুঞ্জনের মাঝেই বুধবারের বিষন্নবেলায় তখন আকাশ মেঘলা। সাধারণ একটি বাড়ির চাতালের বর্ণময় ‘কারখানা’ থেকে বেরিয়ে গেল শববাহী শকট। অন্তিমবারের মতো কারখানা ছাড়লেন বাংলার ‘আলো-সম্রাট’। পড়ে রইল রাজপাট। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)