• গাড়িতে কুপিয়ে মাকে খুন, কন্যার দেহ ফেলা হল খালে
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বড় রাস্তার ধারের ঝোপঝাড়। তার মধ্যে থেকে উঁকি মারছে সাদা চুড়িদার পরিহিতা এক মহিলার দেহ। জামাকাপড় রক্তের দাগ স্পষ্ট। দু’টি পা দু’দিকে ছড়ানো। হাত শরীরের নীচে। মাথার বাঁদিক ক্ষতবিক্ষত। উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন মহিলা। মুখ স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। বুধবার আনন্দপুর থানা এলাকার নোনাডাঙায় এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে পুলিসে খবর দেন এলাকাবাসী। এই ঘটনায় খুনের অভিযোগে পুলিস দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। সঙ্গে খোঁজ চলছিল ঘটনার সময় মহিলার সঙ্গে থাকা কন্যাসন্তানেরও। রাত গড়াতেই ধৃতদের অন্যতম ভিকি সাউয়ের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর বয়ান পায় পুলিস। ভিকি জানায়, তপসিয়ার একটি খালে শিশুকন্যার দেহ ফেলে দিয়েছে সে। তার বয়ানের ভিত্তিতে ওই এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

    আর জি কর পর্বের মাঝেই শহরে ফের মহিলা খুনের ঘটনা। লালবাজার জানিয়েছে, মৃতার নাম রেহানা পারভিন ওরফে বেবি। নারকেলডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা তিনি। মঙ্গলবার বাড়ির ভাড়াটে এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে তপসিয়ায় গিয়েছিলেন রেহানা। তারপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন মহিলা। সেদিন সকালে তার দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ওই ট্যাক্সিচালক ভিকি সাউই তাঁকে খুন করেছে। গাড়ির ভিতরেই লাগাতার ছুরি দিয়ে কোপ মেরে খুন করা হয় মহিলাকে। মৃতার পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ভিকিকে গ্রেপ্তার করে আনন্দপুর থানার পুলিস। ভিকির সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এক নাবালক। তাকেও আটক করেছে পুলিস। অভিযোগ, খুনের পর আনন্দপুরে দেহ লোপাট করে সে। মহিলার সঙ্গে তাঁর ৩ বছরের কন্যাসন্তান ছিল। ঘটনার পর থেকে তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপরেই জেরার মুখে ভিকি সন্তানের দেহ লোপাটের কথা কবুল করে।

    লালবাজার জানিয়েছে, মহিলার নারকেলডাঙার বাসিন্দা হলেও, তাঁর তপসিয়া থানা এলাকায় আরও একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে কয়েকজন ভাড়া থাকেন। প্রতিমাসে ভাড়ার টাকা নিতে যান রেহানা। সঙ্গী থাকে ভিকি। প্রতিবারই রাত সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। মঙ্গলবার সেই সময় পার হয়ে গেলেও ফেরেননি তিনি। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ রেহানাকে ফোন করেন তাঁর বড় মেয়ে। তখন তিনি জানান, বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু, রাত বাড়লেও তিনি ফেরেন না তাই তপসিয়ার বাড়িতে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে জানা যায়, আটটা নাগাদ বেরিয়ে গিয়েছিলেন রেহানা। তপসিয়ার ভাড়াটেরাই ভিকির কথা বলেন। এরপরে ভিকির তালতলার বাড়িতে মায়ের খোঁজ করেন তিনি। সেখানে ট্যাক্সিচালকের স্ত্রী, সন্তান থাকেন। ভিকির অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে নারকেলডাঙা থানায় যান পরিবারের সদস্যরা। তখন পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকার করেনি অভিযুক্ত। 

    এদিন সকালে দেহ উদ্ধারের পরই মৃতার পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন। এরপরেই ভিকিকে লালবাজারে তুলে নিয়ে আসেন হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা। পুলিসের দাবি, সেখানেই জেরার মুখে খুনের কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত। পুলিস সূত্রে খবর, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল ভিকি। গাড়ির ভিতরে ছিল ভিকির নাবালক শাগরেদ। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাওয়ায় ট্যাক্সিচালককে বকাবকি করছিলেন রেহানা। ভিকির ট্যাক্সিতেই গ্লাভ বক্সে ছিল একটি ছুরি। ধৃতের দাবি, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ই এম বাইপাসের উপরে ট্যাক্সি দাঁড়ায়। রাগের বশে ছুরি বের করে একের পর এক কোপ বসাতে থাকে রেহানার শরীরে। গোটা বিষয়টি ঘটে রেহানার ছোট মেয়ের সামনেই। এরপরেই দেহ লোপাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আনন্দপুরের নোনাডাঙা এলাকায়। সেখানেই ঝোপে ফেলে দেওয়া হয় ক্ষতবিক্ষত দেহ। 
  • Link to this news (বর্তমান)