• সরকারি হাসপাতাল ফেরত কিশোরীর মৃত্যু নার্সিংহোমে
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: আর জি কর কাণ্ডের জেরে কর্মবিরতি চলছিল হাসপাতালে। রাতে অসুস্থ কিশোরীকে নিয়ে এলে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক নেই। এরপর পরিবারের সদস্যরা কিশোরীকে দেগঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই মৃত্যু হল কিশোরীর। অভিযোগের তির বারাসত জেলা হাসপাতালের দিকে। 

    ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। এমনকী নার্সিংহোমের কয়েক লক্ষ টাকা বিল মেটাতে পারেনি কিশোরীর হতদরিদ্র পরিবার। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নার্সিংহোম থেকে মৃত কিশোরীর দেহ বাড়ি নিয়ে আসেন। বুধবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা। পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, ‘প্রতিবাদী চিকিৎসকরা পরিষেবা দিলে কালো দিন নেমে আসত না!’

    জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার দেবালয় এলাকার নবম শ্রেণির পড়ুয়া সঙ্গীতা আচার্য বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। ১৮ আগস্ট হঠাৎ করেই তাঁর জ্বর বেড়ে যায়। তড়িঘড়ি পরিবারের লোকজন প্রথমে দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর হাসপাতাল ও পরে বারাসত জেলা হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসে। পরিবারের দাবি, ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসককে পাওয়া যাবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। প্রত্যেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। তা শোনার পরে পরিবার কিশোরীর চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে। তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে তড়িঘড়ি শহর লাগোয়া একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চলে তার। জানা গিয়েছে, কিশোরীর জ্বর, শ্বাসকষ্ট সহ একাধিক উপসর্গ তৈরি হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন জন্ডিস হয়েছে। সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বিল করা হয় নার্সিংহোমের তরফে। পেশায় দিনমজুর কিশোরীর বাবা ধার করে লক্ষাধিক টাকা নার্সিংহোমে জমা দেন। বুধবার সকালেই মারা যায় কিশোরী। বকেয়া থাকা টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেহ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় নার্সিংহোমের তরফে। একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে বিল মেটানো নিয়ে কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। 

    কিশোরীর মা বলেন, এই ক’দিনে নার্সিংহোমে যা বিল উঠেছে তা মেটানো আমাদের সাধ্যের বাইরে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে লোকনাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য নতুন জামা কিনেছিল মেয়ে। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। বারাসত হাসপাতালে সেদিন যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা হতো তাহলে বোধহয় আজ আমার মেয়েকে হারাতে হতো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবারের নিজেদের ইচ্ছেতেই রোগীকে নিয়ে যান। কর্মবিরতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)