• বউ আনতে বাংলাদেশে, ভারতে ঢুকেই ধৃত যুবক
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা বসিরহাট: ‘নয়ত কলসি দড়ি দে দাদা ডুবে মরি রে…’ কয়েকমাস আগে গানটির এই কটা লাইন ইনিয়ে বিনিয়ে গাইছিলেন নদিয়ার নিমাই বিশ্বাস। তারপর বউ আনতে চলে গেলেন বাংলাদেশ।

    তখন বাংলাদেশজুড়ে অশান্তি। থমথমে পরিবেশ। প্রাণভয়ে দেশ ছাড়ছেন সে দেশে আটকে পড়া ভারতীয়রা। ঠিক তখনই স্ত্রীকে আনতে বাংলাদেশ পৌঁছলেন নিমাই। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে বউ নিয়ে ফিরে আসা আর কিছুতেই হচ্ছে না। তবে নিমাই বুদ্ধিমান। ঘাঁতঘোঁত জানেন। ফলে সীমান্ত চত্বরের ফড়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। আর অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন ভারতে। কিন্তু কপাল মন্দ। ধরা পড়ে গেলেন বিএসএফের হাতে। ফের হাতছাড়া বউ। দু’জনেরই স্বরূপনগর জেলে ঠাঁই হল। এখন সম্ভবত নিমাই গাইছেন গানটির অন্য লাইন, ‘আমি বউ চাইলে কেন গালে মারিস চড়...।’

    ঘটনাসূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে নিমাই বিশ্বাসের বিবাহ হয় বাংলাদেশের এক মহিলার সঙ্গে। বিয়ে বৈধ। তারপর দু’জনে নদিয়ায় সংসার পাতেন। অশান্তি শুরু হওয়ার আগে স্ত্রী বাংলাদেশ যান বাপের বাড়ি। তারপর ওপার বাংলায় শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন। ক্রমে তা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ডামাডোলে আটকে পড়েন নিমাইয়ের স্ত্রী। তাঁকে ওই পরিস্থিতি থেকে নদিয়ায় ফিরিয়ে আনতে অবৈধ পথে বাংলাদেশ ঢোকেন নিমাই। ভারতে ফেরার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। যোগাযোগ করেন সীমান্তের এক ভারতীয় ফড়ের সঙ্গে। মোটা টাকায় রফা হয়। সেই ফড়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পার করিয়ে ভারতে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিথান সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেন নিমাই ও তাঁর স্ত্রী। নিশুতি রাতে সীমান্ত পেরিয়েও যান তাঁরা। তবে ভারতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল। বিএসএফ জানতে পেরে যায়। ফড়ের দল যায় পালিয়ে। ভারত সীমান্ত চত্বরে অসহায় অবস্থায় আটকে পড়েন নিমাই তাঁর স্ত্রী ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি। বিএসএফ তাঁদের আটক করে। কোনও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় গ্রেফতার করে স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেয়। বুধবার আদালতে তোলা হয় তাঁদের। প্রত্যেককে পুলিস হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। নিমাই ও হাকিমপুর ও তারালী সীমান্ত থেকে সাত বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা হলেন পলাশ বিশ্বাস। তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাসিন্দা। রহিম মোল্লা নড়াইলের বাসিন্দা। রব্বানি খানের বাড়ি যশোরে।  এমডি সাইফুল্লাহ গাজীর বাড়িও যশোরে। তন্ময় হালদার থাকেন বরিশালে। নিমাই বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী স্মৃতি বিশ্বাসের বাড়ি ভারতের নদিয়ায়। জানা গিয়েছে, নিমাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বহুকাল আগে থেকেই বসবাস করছিলেন। তারপর বিয়ে করেন বাংলাদেশের মহিলাকে। দু’জনে ঘর বাঁধেন নদিয়ায়। এবার ধরা পড়লেন পুলিসের হাতে। আপাতত জেলই তাঁদের ঘরবাড়ি। তবে নিমাইবাবুর বক্তব্য, অশান্ত বাংলাদেশ থেকে বউকে ফিরিয়ে আনতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়েছি। ছাড়া পেয়ে আবার সংসার শুরু করব। 
  • Link to this news (বর্তমান)