• দূরত্ব সরিয়ে মঞ্চে তিন পদ্ম-নেতা, আরজি কর ইস্যুতে পথে কংগ্রেসও
    এই সময় | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • মণিপুস্পক সেনগুপ্ত

    দূরত্ব ঘুচিয়ে দিল আরজি কর। বুধবার একমঞ্চে দেখা গেল বঙ্গ-বিজেপির তিন শীর্ষ নেতাকে—সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষকে। এ দিন তিনজনই দীর্ঘক্ষণ একসঙ্গে হাজির ছিলেন শ্যামবাজারে বিজেপির ধর্নামঞ্চে। অন্যদিকে, এ দিন কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ফিয়ার্স লেনে।আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল বাংলা। দোষীদের বিচার চেয়ে পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ। তাল ঠুকছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু আরজি কর ইস্যুতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ভূমিকায় খুশি নয় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করছেন, এরকম ইস্যুতে আরও জোরালো আন্দোলন করার সুযোগ ছিল সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপদের।

    সূত্রের খবর, গোটা দলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আরজি কর ইস্যুতে আন্দোলনে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বুধবার আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে শ্যামবাজারের ধর্নামঞ্চে দেখা যায় বঙ্গ-বিজেপির প্রথম সারির সব নেতাকেই। এই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁকে সঙ্গত করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।’

    রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘উন্নাও, হাথরাসের পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। কই ওই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পদত্যাগ করছেন না তো!’

    আজ, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। সূত্রের খবর, সেখানেও সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপকে পাশাপাশি হাঁটতে দেখা যেতে পারে। এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের বাইরে যে কেউ এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন। প্রয়োজনে পতাকা ছাড়াই আসুন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’

    বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসও এ দিন আরজি কর ইস্যুতে পথে নামে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি নিয়ে বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে লালবাজার অভিযান করে প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেস। ফিয়ার্স লেনে কংগ্রেসের মিছিল আটকে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন অমিতাভ চক্রবর্তী, সন্তোষ পাঠকের মতো কংগ্রেস নেতারা।

    পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় নেতাদের। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে প্রদীপ, মান্নান, অমিতাভ, সন্তোষদের আটক করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রবীণ নেতাদের পুলিশ আটক করায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন কংগ্রেস কর্মীরা। কিছু সময়ের জন্য অশান্ত হয়ে ওঠে বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিট।

    কংগ্রেসের এই প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কুণালের কটাক্ষ, ‘প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নালকে দেখলাম মর্নিং-ওয়াক করতে করতে পুলিশের ভ্যানে উঠেছেন। ভ্যানে উঠতে ওঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় পুলিশ সে দিকে নজর রেখেছিল।’

    প্রায় চার ঘণ্টা লালবাজারে কংগ্রেস নেতাদের আটক রাখা হয়। লালবাজারে সেন্ট্রাল লক-আপে আটক কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেন। লালবাজার থেকে বেরিয়ে কুণালের কটাক্ষের জবাবে অমিতাভ বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল সিপি-র পদত্যাগ। সাধারণ পুলিশ সেই দাবির সঙ্গে একমত ছিলেন বলে তাঁরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন।’

    বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তর সংগঠন ‘খোলা হওয়া’-র উদ্যোগেও এ দিন আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল হয় মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। তাতে সামিল হয়েছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীও। তিনি বলেন, ‘কলকাতার যদি এই হাল হয়, তবে বাংলার গ্রাম-গঞ্জের অবস্থা কী বোঝাই যাচ্ছে।’ এই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অভিনেত্রী মমতাশঙ্করকেও।
  • Link to this news (এই সময়)