এই সময়, কামারহাটি: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে পরিষেবায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালে। যদিও লাগাতার এই কর্মবিরতির মাঝেও হাসপাতালের ইমার্জেন্সি, ইন্ডোর ও আউটডোর চালুই আছে। কিন্তু শুধুমাত্র হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে এই পরিস্থিতি আর কতদিন মোকাবিলা করা সম্ভব, তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যে পাঁচ জন ডাক্তারকে অস্থায়ী ভাবে কামারহাটি সাগরদত্ত হাসপতালে পাঠিয়েছে। তবে বর্তমান অপারেশনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে এই হাসপাতালে। প্রসূতিদের সিজ়ার ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রোপচার সে ভাবে হচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, আরজি কর-কাণ্ডের আগে প্রতিদিন যেখানে সাগর দত্তে ৭০ থেকে ১০০টি অপারেশন হতো, তা এখন কমে ১৬ থেকে ২২-এ এসে দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে অপারেশনের তারিখ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোগী ভর্তির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম ব্যস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এই সাগর দত্ত। হাসপাতালে বেডের সংখ্যা সাড়ে ছশো। ভিড়ের চাপে একটি বেডে দু’জন করে রোগীকে শুতে হয়। শুধু জুলাই মাসেই আউটডোরে ডাক্তার দেখিয়েছেন ৫৭ হাজার ৫২০ জন। ইমার্জেন্সিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৮৪৬।
কিন্তু আরজি করে চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে কামারহাটি সাগর দত্তের চেনা ছবিটাই পাল্টে গিয়েছে। এমার্জেন্সি ও আউটডোরে রোগীর সংখ্যা কম। ইন্ডোর চালু থাকলেও বহু বেডই ফাঁকা। বুধবার দুপুরে ঘোলার বাসিন্দা নবীন রায় তাঁর ছ’বছরের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। খাট থেকে পড়ে গিয়ে ছেলের মাথায় চোট লেগেছে। কয়েক বার বমিও করেছে।
উদ্বিগ্ন নবীন ছেলেকে নিয়ে সটান ইমার্জেন্সিতে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। কিন্তু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ডাক্তার নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, যিনি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, তিনি আউটডোরে রোগী দেখতে ব্যস্ত। প্রায় ৪০ মিনিট দৌড়ঝাঁপের পর অবশেষে নবীন তাঁর ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন। নবীনের মতো এমন অভিজ্ঞতা অনেক রোগী এবং তাঁদের পরিবারের হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এবং রিপোর্ট দেখাতে আসা মিলিয়ে প্রায় চার হাজার রোগী প্রতিদিন আউটডোরে ডাক্তার দেখাতেন। সেই সংখ্যাই কমে দুশোতে নেমে গিয়েছিল। বুধবার অবশ্য সংখ্যা বেড়ে বারোশো হয়েছে। মঙ্গলবার অপারেশন হয়েছে আটটি। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন প্রায় চারশোর কাছাকাছি রোগী। ডাক্তার থাকবে না এই আশঙ্কায় রোগী পরিবারও নেহাত বাধ্য না হলে আসছেন না বলে মনে করছেন অনেকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক সিনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘বাধ্য হয়ে অপারেশনের সময় পিছোতে হচ্ছে। কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রোগী কম হচ্ছে বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ সিনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্ন এ ভাবে আর কতদিন পরিষেবা দেওয়া সম্ভব?
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা সচল রেখেছেন। ইন্ডোর-আউটডোর সব বিভাগই খোলা। তবে চিকিৎসকের ঘাটতি থাকায় অপারেশনের সংখ্যা কমেছে।’