• ওই রাতে যেন 'হিংস্র জন্তু' হয়ে উঠেছিল সঞ্জয়, ঘটনার আগে ও পরে কী কী করেছিল? শুনে হতবাক CBI-ও
    আজ তক | ২২ আগস্ট ২০২৪
  • Kolkata Trainee Doctor Murder Rape: কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার  সঞ্জয় রায়, আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার, এই খবর সকলেরই জানা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়ে, জানা যাচ্ছে  ঘটনার আগে তার শিকারের সন্ধানে জম্বির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল সঞ্চয়। ৮ অগাস্ট মধ্যরাতে আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের পর সে তাকে হত্যা করলেও হত্যার আগে ও পরে সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শ্লীলতাহানি করতে থাকে। সঞ্চয় রায়কে গ্রেফতার করার পর, সিবিআই যখন গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার কার্যকলাপ স্ক্যান করা শুরু করে, তখন তার সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য প্রকাশ্যে আসে যা তদন্তকারী অফিসারদেরও হতবাক করে দিচ্ছে।

    ৮ অগাস্ট  রাতে সঞ্জয় রায় বিভিন্ন অজুহাতে মোট চারবার আরজি হাসপাতালে যায়।  এর মধ্যে তিনবার হাসপাতালের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে ও বেরিয়ে আসে। কিন্তু চতুর্থ ও শেষবারের মতো হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় ওই চিকিৎসক তার হাতে ধর্ষণ ও খুনের শিকার হন। কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। তদন্তে জানা যাচ্ছে, ঘটনার রাতে সঞ্জয় রায় হাসপাতালের পাশের একটি রেড লাইট এলাকায় গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ফেরার সময় পথে এক মহিলার  শ্লীলতাহানি করেন। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরও তিনি এক মহিলাকে  ডেকে তাঁর সঙ্গেও বিকৃত আচরণ করেন।

    ৮ অগাস্ট, আরজি কর হাসপাতালের চারবার ঘোারর সময়, সঞ্জয় রায় একবার তার আরেক সিভিক  ভলেন্টিয়ার বন্ধুর সঙ্গে  হাসপাতালের ভিতরে যায়। আসলে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার বন্ধুর এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সঞ্চয় সেই আত্মীয়কে দেখতে যাওয়ার অজুহাতে হাসপাতালে ঘোরাফেরা করছিল। তদন্তে জানা গেছে, এই ঘটনা ঘটার পর সঞ্জয় এক মহিলাকে ডেকেছিল, যাকে সে বোন বলে সম্বোধন করেছিল, কিন্তু সত্য হল এই মহিলার সঙ্গেও সে অভদ্র কথা বলে। হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয় রায়কে ৮ অগাস্ট রাতে হাসপাতাল থেকে বের হতে দেখা যায়।

    তদন্তে জানা গেছে, রাতে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর সে প্রথমে সিভিক ভলান্টিয়ার বন্ধুকে নিয়ে সোনাগাছির রেড লাইট এলাকায় যায়। সেখানে তার বন্ধু একটি পতিতার আস্তানায় যায়, কিন্তু সঞ্জয় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর দুজনেই সেখান থেকে চলে যায় দক্ষিণ কলকাতার আরেকটি রেড লাইট এরিয়া চেতলাতে। কিন্তু এখানেও সঞ্জয়ের বন্ধু ভিতরেয়ায় এবং সে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।  তারপর এখান থেকে ফেরার সময়, সে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করে  এবং তার নগ্ন ছবি চায়।

    সঞ্চয়  সোজা চলে যায় ত চেতলা এলাকার একটি রেড লাইট এলাকায়। অর্থাৎ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে  একে একে দুটি রেড লাইট এলাকায় যায়। প্রথমে এক বন্ধুর সঙ্গে সোনাগাছি গিয়েছিল। তারপর একই বন্ধুকে নিয়ে চেতলার পতিতালয়ে পৌঁছে যায় সে। কিন্তু উভয় স্থানেই তার বন্ধু ভেতরে গেলেও সে বাইরে দাঁড়িয়েছিল বলেই জানা যাচ্ছে। ফেরার পথে এক মেয়ের শ্লীলতাহানি করে। মধ্যরাতে ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুন করে আবার এক মহিলাকে ডেকে তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে।

    সঞ্জয় রায়ের এসব কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায় যে, মেয়েদের সান্নিধ্য লাভ ও শ্লীলতাহানি করার অভ্যাস তাঁর মনে কতটা চেপে বসেছিল  যে, সে ক্রমাগত বিভিন্নভাবে একের পর এক তাদের টার্গেট করে চলেছিল। ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করার পর সিবিআই যখন তার অপরাধের কোষ্ঠী বের করে, তখন সঞ্চয়  সম্পর্কে আরও আশ্চর্যকরা  ঘটনা জানা যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে এর আগেও সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে নারী ও মেয়েদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নিজের  এলাকায় অনেক মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল সে। এমনকি, সে তার এলাকায় তোলা  সংগ্রহের কাজও করত।

    এটা হল ব্লু ফিল্মের  আসক্তির সঙ্গে লড়াই করা ধর্ষণ ও খুনের আসামি সঞ্জয় রায়ের চব্বিশ ঘণ্টার তৎপরতার বিবরণ। খুনের পর ঘটনা নিয়ে এখনও কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খুঁজছে সিবিআই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা  কি অন্য কোথাও ঘটিয়ে দেহ এনে সেমিনার কক্ষে ফেলে দেওয়া হয়েছিল? ঘটনা দেখে চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরাও একই প্রশ্ন তুলেছেন এবং এখন এই দিকটিও তদন্ত করছে সিবিআই।

    তদন্তের সময় সিবিআই জানতে পেরেছে যে ৯ অগাস্ট সকালে মৃত  চিকিৎসকের এক সহকর্মী তাঁকে  ঘুম থেকে জাগানোর জন্য হাসপাতালের সেমিনার হলে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন চিকিৎসক ঘুমোচ্ছেন এবং সে ফিরে যায়। ততক্ষণে তাকে খুন করে সেমিনার ঘরে দেহ রাখা হয়।  ওই চিকিৎসককেও জেরা করেছে সিবিআই। কিন্তু ওই চিকিৎসক  তার জবাবে বলেছেন, মহিলা  ডাক্তারকে ডাকতে সেমিনার হলে পৌঁছে তিনি দেখেন, ডাক্তার একটা গদির ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছেন, যা দেখে তার সন্দেহ হয় যে সে হয়তো ঘুমোচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেমিনার কক্ষে মহিলা  চিকিৎসকের দেহ  যেভাবে পড়ে ছিল তা দেখে কি কেউ ভুল বুঝতে পারে? এর জবাবে ওই ডাক্তার বলেন, মৃতদেহের কাছে একটি বেঞ্চ রাখা ছিল, যেখান থেকে সে ডাক্তারকে দেখে ভেবেছিল যে সে ঘুমোচ্ছে। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে, খুনের পর নির্যাতিতা ডাক্তারের মাথায় এমনভাবে হাত রাখা হয়েছিল  যে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে ঘুমোচ্ছে।তাই মহিলা  চিকিৎসককে অন্য কোথাও খুন করে দেহ  সেমিনার ঘরে আনা হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

    অপরাধের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরে, আরও কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যার  সিবিআই গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেমিনার হলের পডিয়ামে ডাক্তারের দেহ পড়ে ছিল। নীচে একটি গদি ছিল এবং একটি বৈদ্যুতিক তারও গদির নীচে পড়ে ছিল। যেখানে হলের মধ্যেই ঘুমনোর জন্য অন্য বিছানাও রয়েছে। তাই  প্রশ্ন উঠছে রাতে ঘুমনোর জন্য পডিয়ামে রাখা ওই ম্যাট্রেসটিকে কেন বেছে নিলেন চিকিৎসক? মৃতদেহের এই স্থান দেখেও সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠছে, যাতে বলা হচ্ছে, ঘটনার পর মৃতদেহ এখানে এনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (আজ তক)