ভরা শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্রের শুরুতেও দিঘার সমুদ্রে সে রকম দেখা নেই সমুদ্রের ‘রুপোলি শস্যে’র। সাধারণত এই সময় মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ে ঝাঁক ঝাঁক ইলিশ। তবে পরপর কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ইলিশের ‘খরা’। প্রমাণ সাইজের ইলিশ খুব একটা মিলছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই ‘খোকা’ ইলিশ। এর জন্য অতিরিক্ত মৎস্য শিকার, মাত্রাতিরিক্ত দূষণ এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য নিলাম কেন্দ্র রয়েছে দিঘা মোহনায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সেখানেও ৫০০ গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশ পাওয়াই যাচ্ছে না। গত কয়েকদিনে ৫০০ গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশ সর্বাধিক ধরা পড়েছে ৩-৪ টন। এর মধ্যে এক কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। ৭০০ গ্রাম থেকে এক কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ টাকায়। অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত ৩০০-৫০০ গ্রাম আকৃতির ইলিশ গড়ে আমদানি হয়েছে ১৫ টন করে।
গত দু-তিন বছর ধরে ইলিশ-প্রাপ্তির একই অবস্থা। ডায়মন্ড হারবারেও ছোট আকারের ইলিশ অধিক আমদানির খবর মিলেছে। ভরা শ্রাবণে কম বেশি ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। তা সত্ত্বেও ইলিশ না মেলায় হতাশ ট্রলার মালিক থেকে শুরু করে মৎস্যজীবীরা। কিন্তু কেন ইলিশের আমদানি হচ্ছে না? বঙ্গোপসাগর ও হুগলি নদীতে ইলিশের দেখা নেই কেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ওই অঞ্চলে নদীতে পলি জমতে শুরু করায় ইলিশের ঝাঁক ঢুকত বাধা পাচ্ছে। এ ছাড়াও, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং ছোট মাছ ধরে নেওয়া একটা বড় কারণ বলেই মনে করছেন মৎস্যজীবীরা।
ইলিশ ধরার জন্য ৯০ মিলি মাইক্রনের কম ব্যাসার্ধ যুক্ত জাল ব্যবহার করা উচিত নয়। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, সম্প্রতি ছোট ফাঁসের জাল থেকে যত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি মাছ ট্রলারগুলো থেকে আসছে। ট্রলারগুলি ‘ট্রল নেট’ ব্যবহার করছে। তাই ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে গিয়ে মাছ পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরাও অনেকে ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া, রয়েছে ‘বটম ট্রলিংয়ে’র চল। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে আগাছা থেকে শুরু করে মাছের বাসস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু ইলিশ সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে যে কাজ হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তুঅনেক মৎস্যজীবী তা মানেন না। ওই নির্দেশে ছোট নৌকায় মাছ ধরা বন্ধের কথা বলা হলেও ট্রলিং ফিশিংয়ে বাধা দেওয়া হয় না। তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলছেন, ‘‘মৎস্য দফতরকে সঠিক এবং কার্যকরী ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। সমুদ্রে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে বড় যন্ত্রচালিত নৌকা অর্থাৎ ট্রলারগুলিকে ৬১ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন বন্ধের আওতায় আনতে হবে। ফিশিং হারবার, জেটি, অকশান সেন্টার এবং মাছ-ঘাটগুলিতে নজরদারি চালাতে হবে।’’
তবে এখনও আশাবাদী বহু মৎস্যজীবী। ‘দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি প্রণব কুমার কর বলছেন, ‘‘এ বছর আবহাওয়া অনেকটাই ইলিশের অনুকূল। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর পূবালী বাতাস রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বড় আকারের ইলিশ বেশি পরিমাণে মিলবে বলে আশা করা যায়।’’