ঝাড়গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা হাতি-হত্যায় গ্রেপ্তার হুলাপার্টির দুই সদস্য
এই সময় | ২২ আগস্ট ২০২৪
এই সময়, ঝাড়গ্রাম: অন্তঃসত্ত্বা হাতির পিঠে জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ করার ঘটনায় দু'জনকে গ্রেপ্তার করল বন দপ্তর। ধৃতেরা হলেন, অজয় মাহাতো এবং দীপক মাহাতো। অজয়ের বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানার রাজাবাসা গ্রামে এবং দীপকের বাড়ি একই থানার লাউড়িয়াদাম গ্রামে। দু'জনেই মানিকপাড়া রেঞ্জের অন্তর্গত হুলাপার্টির সদস্য।যদিও দুই পরিবারের সদস্যরা বলছেন, 'গত মঙ্গলবার বিকেলে বন দপ্তরের লোকেরাই এসে ওদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমন হাতি তাড়ানোর জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু ওদেরকে যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হয়নি।' এ দিকে হুলাপার্টির দু'জন সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পরে বন দপ্তরের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষজন।
হুলাপার্টির দু'জনকে গ্রেপ্তারি বন দপ্তরের 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রয়াস' বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে কটাক্ষও করেছেন অনেকে। ধৃত অজয়ের বিধবা মা ভারতী মাহাতো বলেন, 'আমরা গতকাল চাষের কাজে জমিতে ছিলাম। বাড়িতে ৬ বছরের নাতি ছিল। তখন ফরেস্টার এসে আমার ছেলেকে নিয়ে যান। ১৫ অগস্ট তো ফরেস্টার বাড়িতে এসেই হাতি তাড়ানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার ছেলে যে হাতিকে মেরেছে, তার প্রমাণ কে দেবে? নিরীহ বলেই কি আমার ছেলেকে ফাঁসানো হলো?'
কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলেন, 'হাতি-মৃত্যুর ঘটনাটি পুরোপুরি বন দপ্তরের ব্যর্থতার জন্য হয়েছে। এরা তো নিজেরা হাতি তাড়াতে যেত না। ফরেস্টের অফিসাররা এদেরকে নিয়ে যেত নামমাত্র পয়সা দিয়ে। আর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওরা হাতি তাড়াতে যেত। কিন্তু বন দপ্তর এখন নিজেদের দায় এড়াতে হুলাপার্টির লোকগুলোকে বলির পাঁঠা করছে!'
বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ সালের ৯ নং ধারা (বন্যপ্রাণীকে হত্যা করা) অনুযায়ী ধৃত দু'জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন ঝাড়গ্রামের রেঞ্জ অফিসার দেবজ্যোতি ভৌমিক। বুধবার ধৃত দু'জনকে ঝাড়গ্রামের সিজেএম বিচারক আমিনুর রহমানের এজলাসে তোলে বন দপ্তর। এ দিন আদালতে তোলার সময়ে ধৃত দীপক মাহাতো বলেন, 'আমরা হুলাপার্টির সদস্য। সে দিন হাতি তাড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দূরেই ছিলাম। হাতিটাকে মারিনি।'
এই মামলায় ধৃত দু'জনকে বন দপ্তর থেকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন বিচারক। কারণ এই ঘটনায় বন দপ্তর হাতি-হত্যার তদন্তের জন্য ঝাড়গ্রাম থানায় পৃথক একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল। ঝাড়গ্রাম থানার এই মামলার তদন্তকারী অফিসার ঘটনার মোটিভ কী ছিল এবং এই ঘটনায় আর কারা কারা জড়িত ছিল, তা জানার জন্য আদালতে দু'জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সরকারি কৌঁসুলি অনিল মণ্ডল বলেন, 'বিচারক ধৃত দু'জনকে ছ'দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।'