সরকারি অনুদানে পাড়ার ‘দুর্গা’দের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ, অভিনব সিদ্ধান্ত এই পুজো উদ্যোক্তাদের
প্রতিদিন | ২২ আগস্ট ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে ঠেকানো যাবে কীভাবে? লোলুপ চোখে পিছন থেকে কেউ ওড়না টেনে ধরলে কোন প্যাঁচে তাকে কুপোকাত করা যাবে? শিখবে কিশোরীরা। পুজো অনুদান বাবদ রাজ্য সরকারের ৮৫ হাজার টাকা থেকেই তাদের কিনে দেওয়া হবে পেপার স্প্রে, নানচাকু, সেল্ফ ডিফেন্স স্টিক, জোরালো টর্চ।
আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) ঘটনার পর রাস্তাঘাটের বিপদ এড়াতে এবং মেয়েদের আত্মরক্ষায় স্বাবলম্বী করতে পূর্ব কলকাতার ইস্ট বেলেঘাটা (Beleghata)জনকল্যাণ সংঘের সদস্যরা এমনই অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের পুজো প্রাঙ্গনের পাশেই মাঠ। ফি দিন সেখানে ক্রিকেট, ফুটবলের পাশাপাশি ক্যারাটে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। নিছক খেলার ছলে নয়, এবার ক্যারাটের সেই সমস্ত প্যাঁচ মেয়েদের শেখানো হবে যা তাদের ইভটিজারদের হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করবে। ক্লাবের সদস্য দেবজ্যোতি গুহ জানিয়েছেন, মেয়েদের ক্যারাটের (Karate)বিশেষ কলাকৌশলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নানচাকুর মতো ক্যারাটে প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে তাদের। ছোট বয়স থেকে নানচাকু চালানো শিখে রাখলে আগামীতে তা কাজে আসবে।
এই নানচাকু কেনার টাকা পুজোর অনুদান (Puja Donation) থেকেই সরিয়ে রাখছে ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ। অন্যান্য বারোয়ারি ক্লাবের মতো দুর্গাপুজোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৮৫ হাজার টাকা পাবে তারাও। ক্লাবের সদস্যরা জানিয়েছেন, ”আমাদের ছোটখাটো ক্লাব। প্রচুর অর্থ নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) পুজোর জন্য যে টাকা দিয়েছেন সেখান থেকেই মেয়েদের সাহায্য করা হবে।” কীভাবে? দেবজ্যোতি গুহর কথায়, ”পুজোর খরচ কিছু কমিয়ে এই ফান্ড থেকেই টাকা দিয়ে নানচাকু কেনা হবে মেয়েদের জন্য। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া কোনও কিশোরী ক্যারাটে শিখতে ইচ্ছুক হলে সে ব্যবস্থাও করা হবে।”
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বেলেঘাটার এই ক্লাবের সদস্যরা। তাঁদের বক্তব্য, ধর্ষণ (Rape) একটা সামাজিক ব্যাধি। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB)তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি ১৬ মিনিটে একজন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। সঠিক শিক্ষা ব্যতীত ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রাথমিক পাঠ দিলে কিছুটা হলেও ঠেকানো যাবে ধর্ষণ। ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ তাই মেয়েদের হাতে ‘অস্ত্র’ তুলে দিতে চায়। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পাড়ার কিশোরীদের হাতে কিছু অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। যার মধ্যে রয়েছে সেল্ফ ডিফেন্স স্টিক, পেপার স্প্রে। স্টেনলেস স্টিলের সেল্ফ ডিফেন্স স্টিক ব্যাগে সহজেই বহন করা যায়।
এই উদ্যোগে শামিল ক্লাবের বড়দের বক্তব্য, অনেক মেয়েই রাতে কোচিং ক্লাস সেরে একা ফেরে। আচমকা কেউ রাস্তা আটকালে পেপার স্প্রে চোখে ছিটিয়ে দিলে হামলাকারীর চোখ জ্বালা করবে। এমন অস্ত্র সঙ্গে রাখলে হয়তো বেঁচে যেত আর জি করের মেয়েটিও…।