স্টাফ রিপোর্টার: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মরণসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে তো নয়ই রাজ্যের শাকদলের কাউকেও আমন্ত্রণ জানাল না আলিমুদ্দিন। রাজনৈতিক সংকীর্ণতার গণ্ডি ছেডে় বেরোতেই পারল না সিপিএম, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএম নেতা রবীন দেবের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপিকে দলগতভাবে আমন্ত্রণ করা হয়নি। রাজ্য পার্টি অফিসেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে।’’
সেক্ষেত্রে আলিমুদ্দিনে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। ফলে শমীককে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বুদ্ধবাবুর স্মরণসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না তা নিয়ে দলের মধ্যেই দ্বিমত ছিল। শেষমেশ মহম্মদ সেলিম শিবিরের মতোই প্রাধান্য পেল। মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শাসকদলের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গান স্যালুটের পর এবার প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মরণসভার ক্ষেত্রেও সংকীর্ণ রাজনীতির গণ্ডি ছেড়ে বেরোতে পারল না সিপিএম। সিপিএমের একাংশের মত ছিল, রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সৌজন্যের খাতিরেই মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণসভায় আমন্ত্রণ জানানো উচিত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণের খবর পেয়েই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, অসুস্থ থাকাকালীন বুদ্ধবাবুকে দেখতে বা খোঁজ নিতে একাধিবার গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধবাবুর সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ থেকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা, গিয়েছিলেন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেও। দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন চিকিৎসার। ফলে পার্টির একটা বড় অংশ মনে করছে, স্মরণসভায় রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো যেতেই পারত। কিন্তু সিপিএম সেই রাজনৈতিক সৌজন্যের ধার দিয়েই গেল না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মরণসভায় আজ আসছেন না সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের পরও শেষ যাত্রায় থাকতে পারেননি সীতারাম। চোখের ছানি অপারেশনের কারণে আসতে পারেননি। এবারও অসুস্থতার কারণেই আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বুদ্ধবাবুর স্মরণসভায় আসতে পারছেন না ইয়েচুরি। তবে আসার কথা প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত—সহ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতাদের।
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মরণসভাকে সামনে রেখে এদিন আন্দোলনের বার্তা দিতে পারে সিপিএম নেতৃত্ব। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। আজ স্মরণসভায় বামফ্রন্টের শরিকদলগুলোর পাশাপাশি ফ্রন্টের বাইরে অন্যান্য বামপন্থী দলগুলিকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আজ, স্মরণসভায় বুদ্ধবাবুর লেখা বইয়ের চাহিদা থাকবে পার্টির কর্মী—সমর্থকদের মধ্যে। তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কয়েক হাজার কপি ছাপল সিপিএম। মূলত তিনটি বই বিশেষভাবে ছাপা হয়েছে। সেগুলো হল ‘স্বর্গের নিচে বিশৃঙ্খলা’, ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’ ও ‘পুড়ে যায় জীবন নশ্বর’।
এদিকে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুরনো লেখা, সাক্ষাৎকার ও অনূদিত কবিতা সংকলন ‘স্বপ্ন দেখব বলে’ যুবশক্তির তরফে প্রকাশ করা হয়। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের মুখপত্র যুবশক্তি। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য দপ্তরে এই সংকলন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে হিমগ্নরাজ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।