গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চতুর্থ তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক চিকিৎসকের মৃতদেহ। সেই ঘটনায় প্রথমে আত্মহত্যার তত্ত্ব সাজানো হয়েছিল। পরে খুনের মামলা রুজু করা হয়। এরপর যুক্ত হয়েছিল ধর্ষণের মামলা। তবে যেই ঘরে দেহ মেলে, খুন কি সেখানেই হয়েছিল? এই প্রশ্ন প্রথম থেকেই ঘুরঘুর করছিল সিবিআই তদন্তকারীদের মনে। আর আজ সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই জানিয়ে দিল, তাঁরা মনে করে যে খুন ও ধর্ষণ যেখানেই হয়ে থাক, ক্রাইম-সিন বদল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেও দাবি করা হয়েছিল, সিবিআই নাকি পুলিশি তদন্তে প্রচুর ফাঁক পেয়েছে। তবে রাজ্য আজ আদালতে জানায়, 'কিছু বদলে যায়নি। সব কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি রয়েছে।'
প্রসঙ্গত, হাই কোর্টের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের বদলে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তভার কাঁধে নিয়েছে সিবিআই। এদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। এই আবহে আরজি কর কাণ্ডে তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা জানতে চেয়ে সিবিআই-কে আজ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, আজ শীর্ষ আদালতে অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিলেন তদন্তকারীরা।
এদিকে গত ৬ দিনে ধরে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীর ঘোষকে জেরা করে চলেছে সিবিআই। গতকাল সন্দীপ ঘোষের গাড়িতেও তল্লাশি চালান সিবিআই আধিকারিকরা। অপরদিকে আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে থ্রিডি স্ক্যানার দিয়েও তল্লাশি চালিয়েছে তারা। গতকাল আবার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবেও গিয়েছিলেন তাঁরা। অপরদিকে ধৃত সঞ্জয় রায়কেও জেরা চালিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। তার থেকে সেই খুনের রাতের বেশ কিছু তথ্য তারা জানতে পেরেছে। তবে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয়ের বয়ানে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই আবহে সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি পেয়েছে সিবিআই। যদিও সেই টেস্ট পিছিয়ে গিয়েছে। এছাড়া আরজি করের মোট ২০ জন কর্মীকে এখনও পর্যন্ত সিবিআই জেরা করেছে। সঞ্জয় ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তকেও জেরা করেছে সিবিআই।
এদিকে এর আগে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, সিবিআই সূত্র মারফত নাকি জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে যাওয়া তথ্য-প্রমাণ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। সুরতহাল, তরুণীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এত তাড়াহুড়ো? এরই মাঝে বারংবার আরজি করে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। এই আবহে তাঁরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না যে সেমিনার হলেই সেই চিকিৎসককে খুন করা হয়েছিল কি না।
আরজি করের চেস্ট বিভাগে ৬০টি শয্যা রয়েছে। তা ছাড়া, সেমিনার হল-সহ আরও দু’টি ঘর। সেই দুই ঘরে রাতে কেউ থাকে না। সেখানেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে সেই চিকিৎসককে। সিবিআই অফিসাররা এমনটাই মনে করছেন বলে দাবি রিপোর্টে। এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতেই বারার থ্রিডি স্ক্যানারের মাধ্যমে ম্যাপিং এবং ভিডিয়ো করা হয়েছে আরজি করের সেই অভিশপ্ত চার তলায়।