রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর (Buddhadeb Bhattacharya) স্মরণসভাকে সামনে রেখে আর জি কর ইস্যুতে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে নামল সিপিএম। শুধু তাইই নয়, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের স্মরণসভায় কমরেডদের বক্তব্য ছাপিয়ে উঠল সুবিচারের দাবি। ‘লাল সেলাম’ স্লোগান (Slogan) পিছনে ফেলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এ মুখর গোটা প্রেক্ষাগৃহ। বক্তাদের কথাতেও আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন প্রসঙ্গ। রাস্তায় নামার বার্তা দিয়ে কর্মী, সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস কমরেডদের। চেষ্টা হল দলকে ঝাঁকুনি দেওয়ারও। সভার শেষে এও শোনা গেল, ‘‘স্মরণসভার একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর।’’ বিপ্লবের এ যেন এক নতুন রূপ দেখা গেল বাম সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভায়!
বৃহস্পতিবার বিকেলে নেতাজি ইন্ডোরে (Netaji Indoor Stadium) স্মরণসভার অনুষ্ঠান শুরু হতেই স্টেডিয়াম কার্যত ভর্তি হয়ে যায় পার্টির কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়ে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ছিলেন প্রথম বক্তা। দলের তরুণ প্রজন্মকে তাঁর বার্তা, বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন মনে মনে চাইলে, শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখলে হবে না। দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে বিমান বসু (Biman Basu) বলেন, ‘‘অনেকে ভাবেন, সংগঠন শুধু বক্তৃতা করে করা যায়। এটা ভুল ধারণা। সংগঠন শুধু বক্তৃতা করে করার কথা বুদ্ধদেব ভাবতেন না। কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতেন, সমস্যার কথা জানতেন, সমাধান করে দিয়ে আসতেন। এখনকার প্রজন্মকে খেয়াল রাখতে হবে, মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এই কাজ করার লক্ষ্যে শপথ নিতে হবে। তবে বুদ্ধদেবের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।’’ শ্রোতার আসনে বসে বিমান বসুর বক্তব্য অবশ্য মন দিয়ে শুনতে দেখা গেল প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
এদিন বুদ্ধবাবুর স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ, নীরবতা পালনের পাশাপাশি আর জি করের (RG Kar Hospital) নিহত তরুনী চিকিৎসকের প্রতিও নীরবতা পালন করে সিপিএম নেতৃত্ব। আর তখনই স্লোগান ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। সিপিএম (CPM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রবীন্দ্র ভাবনার মধ্যে পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে না, কিন্তু পূর্ণতা অভিলাষী হতে হবে। বুদ্ধদা এতে জোর দিতেন। আমরা তাঁকে স্মরণ করায় সফল হব যদি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রয়াস বাড়াতে পারি। যা ঘাটতি আছে তা পূরণ করার শপথ নিতে হবে।’’ সেলিমের কথায়, ‘‘দোষে-গুণেই মানুষ। কেউ ১০০ শতাংশ ঠিক হতে পারে না। তবে বুদ্ধদা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার মধ্যে কোনও অসততা ছিল না।’’ এর পরই আর জি কর প্রসঙ্গে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ওই চিকিৎসকের জন্য রাজ্য পথে নেমেছে। লাগাতার আন্দোলন সংগ্রামের তীব্রতা বাড়াতে হবে। বুদ্ধদার ভাষায় বলতে হবে, এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে।’’
অসুস্থতার কারণে দিল্লির এইমসে (AIIMS, Delhi) ভর্তি থাকা অবস্থাতেই এক ভিডিও বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আমি এই স্মরণসভায় যোগ দিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম না, এটা আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। দুঃখ ও হতাশা হচ্ছে আমি থাকতে পারলাম না।’’ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আমলে সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের মতো কোনও বিতর্কিত বিষয় এদিন উঠে আসেনি।
এদিন বুদ্ধবাবুর স্মরণে স্মৃতিচারণা করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। এদিন শ্রোতার আসনেই ছিলেন বুদ্ধদেববাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন। এদিন সিপিএমের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও কংগ্রেসের তরফে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান, অসিত মিত্ররা। ছিলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়, মনোজ ভট্টাচার্য, কার্তিক পাল, চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, অসীম চট্টোপাধ্যায়-সহ বাম নেতারা। বিজেপির তরফে শমীক ভট্টাচার্য আমন্ত্রিত থাকলেও আসেননি। পিডিএসের তরফে কাউকে দেখা যায়নি। ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্তও। স্মরণসভায় সংগীত পরিবেশন করেন লোপামুদ্রা মিত্র, আবৃত্তি করেন উর্মিমালা বসু। শুরুতে বুদ্ধবাবুর উপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একাধিক বই বিক্রি হয় স্টল থেকে।