• পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ একশো শতাংশ খরচ করে নজির লাভপুর ব্লকের
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দ করা অর্থ পশ্চিমবঙ্গে ঠিকমতো খরচ করা হয় না বলে অপবাদ দেয় কেন্দ্র। বরাদ্দ করা অর্থ ফেরত চলে যায় বলে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা আঙুল তোলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। তবে বাস্তব এতটাও অপবাদযোগ্য নয়। অন্তত হিসেব তাই বলছে। এই অপবাদের বিরুদ্ধে যোগ্য জবাব হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরভূম জেলার লাভপুর ব্লক। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে বরাদ্দ অর্থ খরচের নিরিখে রাজ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে এই ব্লক। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১০০ শতাংশ কাজ করার রেকর্ড করেছে লাভপুর ব্লক। এমন নজির রাজ্যের আর কোনও ব্লক দেখাতে পারেনি, এমনটাই দাবি স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের। মূলত রাস্তাঘাট, পানীয় জল, বিদ্যুদয়ন, নিকাশি প্রভৃতি খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ খরচ করে নজির সৃষ্টি করেছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই ব্লক। স্বভাবতই খুশিতে ভাসছেন জেলা প্রশাসন, স্থানীয় বিধায়ক সহ ব্লক আধিকারিকরা। 

    কৃষি প্রধান এলাকা বলে পরিচিত লাভপুর। অধিকাংশই পঞ্চায়েত এলাকা। তাই শহরের মতো ঝাঁ চকচকে ব্যাপার নেই। বরং কুয়ে নদীর বন্যায় লাভপুরবাসীর একাংশকে প্রতিবছর ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এর জন্য ব্লক প্রশাসনেরও বাড়তি খরচ হয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে। পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ার কারণে শহরের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে লাভপুর। উপরন্তু বাম আমলে সেভাবে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেই অভিযোগ বর্তমান শাসক দলের। তবে প্রেক্ষাপট পাল্টাতে শুরু করে ২০১১ সালে, রাজ্যে পালাবদলের পর। বিধানসভার ১১টি অঞ্চলে রাস্তাঘাট তৈরি, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুদয়ন, নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করতে ড্রেন, পানীয় জল, বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ প্রভৃতি খাতে অর্থ বরাদ্দ করে ব্লককে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়। সেই কাজে যে ভাটা পড়তে দেয়নি ব্লক প্রশাসন তার হাতে গরম প্রমাণ, কেন্দ্র সরকারের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের একশো শতাংশ অর্থের সদ্ব্যবহার। জানা গিয়েছে এই অর্থবর্ষে সংশ্লিষ্ট ব্লককে ১ কোটি ১২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৭১ টাকা ৯৬ পয়সা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই টাকা ইন্দাস, কুরুন্নাহার, বিপ্রটিকুরি, লাভপুর ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত, জামনা, ঠিবা সহ সংশ্লিষ্ট ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েতের উন্নয়নে খরচ করা হয়েছে। তার মধ্যে নিকাশির জন্য ড্রেন, ঢালাই রাস্তা, কৃষি ও পানীয় জলের জন্য সাবমার্সিবল পাম্প বসানো, পুকুরে স্নানের ঘাট তৈরি উল্লেখযোগ্য। 

    প্রসঙ্গত, রাজ্যে বরাদ্দ অর্থ খরচের বিষয়ে একমাত্র লাভপুরে ১০০ শতাংশ খরচের রেকর্ড করেছে। লাভপুর ছাড়াও খরচের নিরিখে সুনাম অর্জন করেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার। সংশ্লিষ্ট ব্লক ৯৯.৮৯ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে। এছাড়া নদীয়ার করিমপুর দুই ব্লক ৯৯.১৫ শতাংশ, হরিণঘাটা ব্লক ৯৬.৫৩ শতাংশ, একই জেলার নবদ্বীপ ব্লক ৯৬.০৭ শতাংশ বরাদ্দ অর্থ খরচ করেছে। তার মধ্যে রাজ্যে শীর্ষ স্থান দখল করায় উচ্ছ্বসিত বীরভূম জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন এই অনন্য নজির বীরভূমের বাকি ব্লকগুলিকেও উজ্জীবিত করবে। সংশ্লিষ্ট ব্লকের আধিকারিকদের অভিনন্দন জানাই। বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসনের মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই নজির সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। জেলাশাসক সহ জেলা প্রশাসন পাশে ছিল বলেই লাভপুর ব্লক এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে। এর জন্য আমরা গর্বিত। বিডিও শিশুতোষ প্রামানিককেও অভিনন্দন জানাই।
  • Link to this news (বর্তমান)