• শাড়িতে কাঁথাস্টিচের নকশা বুনে আত্মনির্ভর মঙ্গলকোটের নারীরা
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: স্বামীরা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। কেউ কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, আবার কেউ চেন্নাইতে থাকেন। গ্রামে তাঁদের স্ত্রীরা ‘গাছি তসর’-এর শাড়িতে কাঁথাস্টিচের নকশা বোনেন। মঙ্গলকোটের লক্ষ্মীপুর, শ্যামবাজার, পিণ্ডিরা গ্রামের মহিলাদের হাতে তৈরি এমন কাঁথাস্টিচের শাড়ি এখন রাঁচি, মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা শহরে পাড়ি দিচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের পরিয়ায়ী শ্রমিকদের বধূরা এইভাবেই স্বনির্ভর হচ্ছেন। তাঁদের দাবি, সরকারি প্রশিক্ষণ পেলে এই শিল্পে আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে। 

    মঙ্গলকোটের নাম শুনলেই একটা সময়ে অনেকের হৃদকম্পন শুরু হয়ে যেত। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বোম বারুদের গল্প শোনা যেত মঙ্গলকোটের বহু অঞ্চলেই। সেই মঙ্গলকোট এখন অনেক বদলেছে। গ্রামের বধূরা এখন সূচ সূতোয় নকশা তুলে দামি শাড়ি বোনেন। পুজোর আগে তাঁদের খাওয়ার ফুরসত মেলে না। মেয়েদের পোশাক থেকে নানা শাড়ি কাঁথাস্টিচের নকশা তুলে বিক্রি করেন। মাত্র দশ বছরেই মঙ্গলকোটের লক্ষ্মীপুর, পিণ্ডিরা, শ্যামবাজারের মহিলাদের জীবন বদলে গিয়েছে। 

    শিল্পীরা জানান, বোলপুর থেকে শাড়ির থান কিনে নিয়ে তারপর সেখানে নকশা আঁকা হয়। এরপরে রঙিন সূচ, সূতো দিয়ে নকশা এঁকে শাড়ি তৈরি করা হয়। গাছি তসর থেকে ব্যাঙ্গালোর সিল্ক সবই তাঁরা তৈরি করেন। লক্ষ্মীপুর গ্রামের শিল্পী পারুল খাতুন বলেন, গাছি তসর আমরা দশ থেকে ১২ হাজার টাকা দাম পাই। আর ব্যাঙ্গালোর সিল্ক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দাম পাই। একটা সময়ে আমাদের এখানে কাঁথা বুনেই দিন কাটাতে হতো। এখন আমাদের হাতের তৈরি শাড়ি রাঁচি, ওড়িশা, মুম্বই পাড়ি দিচ্ছে। আরেক শিল্পী সেরিনা বিবি বলেন, আমাদের স্বামীরা ভিনরাজ্যে পরিয়ায়ী শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন আমরাও সংসারে খরচ সামলাতে স্বামীদের পাশে দাঁড়াই। ছেলেমেয়েদের বায়না মেটাই। খুবই ভালো লাগছে স্বনির্ভর হতে পেরে। 

    টুম্পা বিবি, টুলি বিবি বলেন, আমরা যদি সরকারি প্রশিক্ষণ পেতাম তাহলে বিদেশে যেতে পারতাম। আমাদের কাঁথাস্টিচের কাজ নিয়ে অনেকেই এখন বিদেশ যাচ্ছেন। আমরা এখানে শুধু মেলাগুলিতে যাই। আমাদের আঁকার জন্য অন্যের উপরে নির্ভর করতে হতো। প্রশিক্ষণ পেলে নতুন নতুন ডিজাইন জানতে পারতাম। ঠাকুরমাদের কাছে শেখা কাঁথা বোনা এখন যে এভাবে কাজে লাগবে ভাবতে পারিনি। মঙ্গলকোটের এসব গ্রামে এখন মহিলারা সংসার সামলে কাঁথাস্টিচের শাড়ি, মেয়েদের চুড়িদার, ছেলেদের পাঞ্জাবি সবেতেই নকশা ফুটিয়ে তোলেন। কেউ নিজের বাড়িতে বসে বোনেন, আবার কেউ একসঙ্গে বসে গল্প করতে করতে বোনেন। সবাই এখন পুজোর জন্য শাড়ি বুনতে ব্যস্ত।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)