• উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে গুণধর বৃদ্ধের বাড়িতে চড়াও শিক্ষিকারা
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: প্রতিদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে শিক্ষিকাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কোন শিক্ষিকা কার সঙ্গে গল্প করছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন, সব লক্ষ্য করে। এমনকী বেনামে চিঠি লিখে নানা কটূক্তি শিক্ষিকাদের। কোথায় শিক্ষিকা বাড়ি ভাড়া থাকেন, তাতেও নজরদারি। এভাবেই দিনের পর দিন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ স্কুলের শিক্ষিকারা! অবশেষে একযোগে অভিযুক্তর বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানালেন শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার কার্যত ‘দুর্গতিনাশিনী’ রূপে দেখা গেল সিউড়ি শহরের আরটি গার্লস স্কুলের শিক্ষিকাদের। এই ঘটনায় শহরজুড়ে শোরগোল পড়েছে।  

    স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের উল্টোদিকেই থাকে ওই বৃদ্ধ। পুলিসের খাতায় এর আগে তার নাম উঠেছে। তার বিরুদ্ধেই এদিন শিক্ষিকারা গর্জে উঠলেন। ঘটনার সূত্রপাত এক বছর আগে। হঠাৎই স্কুলের এক শিক্ষিকা পোস্টের মাধ্যেমে একটি চিঠি পান। তাতে বিভিন্ন রকম আপত্তিকর বাক্য লেখা ছিল। যেমন, ‘তুমি আগের মতো আমার দিকে তাকাও না। অন্য কোনও শিক্ষক চলে আসার পর থেকেই আর পাত্তা দিচ্ছ না’। বিষয়টিকে শুরুতে আমল দেননি শিক্ষিকারা। পরে একজন পিওনের সূত্রে জানা যায়, ওই বৃদ্ধ নাকি পরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল চিঠিটা স্কুলের দিদিমণির কাছে গিয়েছে কিনা! এতেও স্কুল তেমন আমল দেয়নি। পরে গত ১৬ জুলাই সিউড়িতে এক শিক্ষিকার ভাড়াবাড়ির সামনে একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই আগের মতোই হাতের লেখা। তবে এবার অবশ্য ডাকযোগে চিঠি যায়নি। সেখানেও নানা কথা লেখা ছিল। যেমন, বিপদতারিণীর পুজোর তাগা বেঁধো। এমনকী সম্প্রতি ওই ভাড়াবাড়ির মালিকের কাছে গিয়েও বৃদ্ধ খোঁজখবর নেয় বলে জানতে পারেন শিক্ষিকারা। তাতেই ভাঙে সহ্যের সীমা। এদিন সকালে বৃদ্ধের বাড়ির সামনে স্কুলের ৩২ জন শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী হাজির হন। তা দেখেই ওই অভিযুক্ত নীচে নেমে আসে। এরপর কিছু বলার আগেই বৃদ্ধ বলে, চিঠি আমি লিখেছি তার প্রমাণ কী আছে? এরপর শিক্ষিকারা আরও রেগে যান। প্রতিবাদের সুরে বলেন, আমরা তো চিঠির কথা বলিনি, তাহলে আপনি চিঠির কথা আগেই জানলেন কী করে? এরপর সে শিক্ষিকাদের উদ্দেশে কটূক্তি করে বলে অভিযোগ। পাল্টা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শিক্ষিকারা। থানাতেও খবর দেন। পরে পুলিস গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃদ্ধকে তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় শিক্ষাকাদের এই ‘দুর্গতিনাশিনী’ রূপ বর্তমান সময়ের নিরিখে যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক বলে মনে করা হচ্ছে। 

    স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ক্রিস্টিনা মার্ডি বলেন, বারবার এই ধরনের ঘটনা আর মেনে নেওয়া যাচ্ছিল না। বয়স্ক মানুষ হলে কী হবে? ওর ব্যবহার তো একপ্রকার ইভটিজারদের মতোই। কেন মেনে নেব? আগে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। সেই ভিত্তিতেই পুলিস আশা করি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমরা শিক্ষিকারা প্রতিবাদ করলে তবেই এইসব মানসিকতার মানুষগুলোর বিরুদ্ধে গোটা সমাজ লড়াই-এর সাহস পাবে। আরটি গার্লস স্কুলই এই পথ দেখাল। 

    সিউড়ি থানার এক অফিসার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)