• ভুটানের নদীতেই ডুয়ার্সের গভীর বিপদ দেখছে সেচদপ্তর, রাজ্যে যাচ্ছে রিপোর্ট
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: রেতি, সুকৃতি, তোর্সা, পানা, বাসরা, রায়ডাক...। ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ২৫টি নদী ও ঝোরা নেমেছে ভুটান পাহাড় থেকে। এসব নদীতেই ডুয়ার্সের ভয়াবহ বিপদ দেখছে সেচদপ্তর। কারণ, সিমেন্ট থেকে খনি, ভুটানের যাবতীয় ফ্যাক্টরির বর্জ্য নেমে আসছে ওইসব নদী দিয়ে। এরই জেরে বুজে যাচ্ছে নদীখাত। ফলে ভুটান পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হলে কিংবা কখনও যদি হড়পা বান আসে, তাহলে ডুয়ার্সের বহু গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা সেচদপ্তরের আধিকারিকদের। এনিয়ে সেচদপ্তরের উত্তরপূর্ব বিভাগ রিপোর্ট পাঠাচ্ছে রাজ্যে। দপ্তরের উত্তরপূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলির অবস্থা ভালো নয়। প্রচুর বর্জ্য বহন করে নীচে নামার কারণে প্রতিটি নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। জয়গাঁ, চামুর্চির মতো জনপদ নদী থেকে প্রায় ২০ ফুট নিচু হয়ে গিয়েছে। বড় বিপর্যয় হলে গোটা এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এনিয়ে রাজ্যকে জানানো হচ্ছে।

    অভিযোগ, ভুটান লাগাতার মাইনিং করছে। পাহাড় কাটার পর তারা পাথরগুলো আর সরাচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিতে সেই পাথর এসে পড়ছে নদীতে। তারপর নদী তা বহন করে এনে ফেলছে ডুয়ার্সে। এতেই ঘনাচ্ছে বিপদ। তিলে তিলে সর্বনাশের দিন এগিয়ে আসতে দেখেও কিছুই করা যাচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সেচদপ্তরের আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এখন ইন্দো-ভুটান নদী নিয়ে যে কমিটি রয়েছে, তা মূলত টেকনিক্যাল কমিটি। এই কমিটি প্রস্তাব দিতে পারে। কিন্তু তা কার্যকর করতে হলে কমিটিতে মন্ত্রী কিংবা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের যুক্ত করা দরকার। সেজন্য ব্রহ্মপুত্র রিভার কমিশনের মতো ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন দরকার। রাজ্য সেটাই চাইছে। কিন্তু এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে কেন্দ্রকে।

    অভিযোগ, ইন্দো-ভুটান নদী নিয়ে যে কমিটি রয়েছে, নিয়মিত তার বৈঠক হয় না। ২০২০ সালের পর শেষ বৈঠক হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সেচদপ্তরের উত্তরপূর্বের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি বৈঠকে ভুটানকে বারবার বলে থাকি, নদীতে যাতে বোল্ডার, নুড়ি-পাথর না পড়ে। সেজন্য যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় তারা। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায়? ব্রহ্মপুত্র নদী কমিশনে তাও বছরে দু’বার বৈঠক হয়। ইন্দো-ভুটান নদীর ক্ষেত্রে বছরে একবার বৈঠক, তাও হচ্ছে না। গত বুধবার সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক ছিল। সেখানেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বিপদের মুখে পড়তে পারে আলিপুরদুয়ার তথা ডুয়ার্সের একটা বড় অংশ।

    তোর্সা, বাসরা, রায়ডাক সহ ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা ১৪টি নদী নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা চালায় সেচদপ্তর। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রতিটি নদীই নাব্যতা হারিয়েছে। এ কারণে তারা ঘনঘন গতিপথ বদল করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনবসতি, চা বাগান ও কৃষিজমি।
  • Link to this news (বর্তমান)