• ‘ডাক্তারদের কাজে ফিরতেই হবে’, কর্মবিরতি চলবে না, মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিতেও ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বিক্ষোভ ছেড়ে কাজে ফিরুন। বিচার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা, এই দুটো কখনও ধর্মঘট করতে পারে না। রোগী দেখতেই হবে। চিকিৎসা পরিষেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। ডাক্তার ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলবে কী করে? আর জি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার এমনই মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সাফ জানালেন, কর্মবিরতি চলবে না। সেই সঙ্গে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে রাজনীতিতেও চরম ক্ষুব্ধ সর্বোচ্চ আদালত। শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা এবিষয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেই চলেছেন। সলিসিটর জেনারেল ও রাজ্যের আইনজীবীর কাছ থেকে সেকথা শুনে এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কোনও রাজনীতি করবেন না। সব দলকে একথা বুঝতে হবে। আইনকে আইনের পথে চলবে।’

    চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা নিরসনে এদিন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজি পুলিসের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্য‌বস্থা নিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে। প্রধান বিচারপতির সাফ কথা, ‘বিচার চেয়ে আমরা কি সুপ্রিম কোর্টের বাইরে বসে যেতে পারি? ফলে ডাক্তারদের কাজে ফিরতেই হবে। বাকি আপনাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ ‘ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স’ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গোটা দেশে চিকিৎসক এবং হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়ে রিপোর্ট দেবে। 

    আর জি কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই মামলা দায়ের করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে এদিন ছিল দ্বিতীয় শুনানি। সেই পর্বেই আর জি কর হাসপাতালে বিক্ষোভরত মহিলা চিকিৎসকদের একাংশকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন এক আইনজীবী। তা শুনেই প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘কারা হুমকি দিচ্ছে, আমাদের লিখে জানান। এদিনের নির্দেশের পরেও যদি এ জাতীয় কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে পরের দিনের শুনানিতে বলবেন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে।’ এই প্রসঙ্গেই দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের প্রসঙ্গ তোলা হয়। প্রধান বিচারপতি তখন প্রশ্ন করেন, ‘কতদিন ধরে আপনারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন?’ জবাব আসে, ঘটনার দিন থেকে। এরপরই প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট ভাষায়  জানান, তাহলে ১৩ দিন ধরে এইমসের ডাক্তাররা কাজ করছেন না। দয়া করে কাজে যোগ দিন। বিক্ষোভরত ডাক্তাররা কাজে যোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না কর্তৃপক্ষ। এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু যদি তাঁরা ডিউটিতে না ফেরেন, তাহলে আইন আইনের পথে চলবে। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভে বাধা নেই। রাজ্য সরকার বা পুলিস তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। আইন মোতাবেক বিধি মেনে বিক্ষোভ করা যাবে। 

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো এদিন মুখবন্ধ খামে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। একইভাবে ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে কলকাতা পুলিস কী তদন্ত করছে, তার রিপোর্টও বিচারপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুই মামলাতেই তদন্ত যেমন চলছে, তেমনই চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানির আগে উভয়কেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নতুন রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)