এই সময়: নেতাজি ইন্ডোরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে লাল-সেলাম জানাল যে জনতা, তারাই স্লোগান দিল 'জাস্টিস ফর আরজি কর'। রবীন্দ্রসঙ্গীতে গলা মেলাল যে জনতা, তারাই আওয়াজ তুলল 'জাস্টিস ফর আরজি কর'। বুদ্ধদেবের স্মরণ-সভায় হাজার কণ্ঠে যাঁরা 'কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল' সঙ্গীত গাইলেন, তাঁরাই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করলেন।সিপিএম নেতৃত্বের সামনে বৃহস্পতিবার যখন জনতা স্লোগান দিল, 'স্মরণসভার একটি স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর', তখন বাম নেতৃত্বও বুঝে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা কার্যত আরজি করের প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়েছে। নেতাজি ইন্ডোরে হাজার দশেক জনতার এই মেজাজ দেখেই স্মরণসভার শেষ বক্তা হিসেবে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ব্যবহার করেন বুদ্ধদেবের স্লোগান— 'এ লড়াই লড়তে হবে। এ লড়াই জিততে হবে।'
২০১৫-য় বামেদের ব্রিগেডে বুদ্ধদেব শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এই স্লোগান দেন। আরজি করের ঘটনায় উত্তাল বাংলার প্রেক্ষাপটে বুদ্ধদেবের এই স্লোগান হাতিয়ার করার পাশাপাশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর 'স্বপ্ন'কে বাঁচিয়ে রাখতে লড়াইয়ের বার্তাও দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
সেলিমের কথায়, 'কেউ একশো শতাংশ ঠিক হতে পারেন না। দোষেগুণে মানুষ। কিন্তু বুদ্ধদা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার মধ্যে কোনও অসততা ছিল না। তিনি যুব আন্দোলন থেকে উঠে এসেছিলেন। তাই বাংলার নতুন প্রজন্মকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন।' রবীন্দ্রপ্রেমী বুদ্ধদেবের স্মরণসভায় আগাগোড়া বিভিন্ন শিল্পীর গলায় রবি-গান শোনানোর আয়োজন ছিল। স্মরণসভার শিরোনাম ছিল 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির'।
ছিল বুদ্ধদেবের নিজের কণ্ঠে রেকর্ডেড রবীন্দ্র-আবৃত্তিও। বুদ্ধ-জায়া মীরা ও তাঁদের সন্তান সুচেতন সভায় সামনের সারিতে থাকলেও মঞ্চে উঠতে চাননি। কিন্তু আগে রেকর্ড করা মীরার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণার ভিডিয়ো প্রদর্শিত হয়। বুদ্ধ-জায়ার কথা থেকে জানা গেল অসুস্থ হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী হওয়ার আগে আরও একটি বই লেখার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব।
এ নিয়ে পড়াশোনা, তথ্য সংগ্রহও শুরু করেন। কিন্তু করোনা-পর্বে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরে আর লেখা শেষ করে উঠতে পারেননি। সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য সম্পাদক থাকার সময়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক দিন চিকিৎসার পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রবল পীড়াপীড়ি করতে শুরু করেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বুদ্ধদেবকে বোঝাতে যান সূর্যকান্ত মিশ্র।
সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদকের কথায়, 'আমাকে দেখেই বুদ্ধদা বলেন, 'মাই লাইফ ইজ় মাই লাইফ।' আমি তখন বাধ্য হয়ে বলি ইয়োর লাইফ ইজ় নট ইয়োর লাইফ, নট ইয়োর প্রপার্টি। ইটস পার্টি'জ় প্রপার্টি। এ সব বলে বোঝাতে পেরেছিলাম আরও কিছু দিন ওঁকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।'
বুদ্ধদেবের স্মরণসভায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে লোপামুদ্রা মিত্র, পবিত্র সরকার, আনিস খানের বাবা সালেম খান-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান থেকে নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়, এসইউসিআই(সি) এবং লিবারেশন নেতৃত্বও।