রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি নিয়ে জল্পনার মধ্যেই নতুন মাত্রা যোগ করল গত ১২ তারিখের একটি গোপন বৈঠক। আরএসএস-বিজেপির সেই রুদ্ধদ্বার ‘সমন্বয় বৈঠক’-এ দলের এক সাংসদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছে পদ্ম শিবিরের একাংশ।বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইতিমধ্যেই ঠাঁই পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক ব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারেন না। ফলে সুকান্তকে ছাড়তেই হবে রাজ্য সভাপতি পদ। তাঁর বদলে কে চেয়ারে বসবেন, তা নিয়ে গত দু’মাস ধরে চর্চা চলছে বিজেপিতে। সূত্রের খবর, আরজি করের ঘটনায় বাংলা উত্তাল না হলে এতদিনে ঘোষণা হয়ে যেত সুকান্তর উত্তরসূরির নাম।
এই আবহে গত ১২ অগস্ট হুগলির ব্যান্ডেলে আরএসএস-বিজেপির সমন্বয় বৈঠক হয়। রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য তিন-চার মাস অন্তর এই সমন্বয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গেরুয়া শিবিরে এই রীতি বহু বছরের। ১২ তারিখের ওই বৈঠকে যোগ দিতে বঙ্গ-বিজেপির শীর্ষ নেতা সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তীদের সঙ্গে ব্যান্ডেল গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোও।
যা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবিরে। কারণ, জ্যোতির্ময় ছাড়াও বঙ্গ-বিজেপিতে আরও কয়েকজন সাধারণ সম্পাদক আছেন। যেমন, লকেট চট্টোপাধ্যায়, দীপক বর্মণ, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা কেউই আমন্ত্রণ পাননি আরএসএস-বিজেপির ওই বৈঠকে। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘দলে তো আরও অনেক সাধারণ সম্পাদক আছেন, জ্যোতির্ময়কেই কেন বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হলো?’
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পরে সুকান্তর কাছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে চেয়েছিলেন, নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে তাঁর কাকে পছন্দ? সূত্রের খবর, তিনিই জ্যোতির্ময়ের নাম প্রস্তাব করেন। এরপর ব্যান্ডেলে আরএসএসের সঙ্গে সমন্বয়ের বৈঠকে পুরুলিয়ার সাংসদের ডাক পড়ার মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে বলে মনে করছেন বিজেপির অনেকেই।
১২ তারিখের সমন্বয় বৈঠকে হাজির ছিলেন সর্বভারতীয় স্তরের শীর্ষ আরএসএস নেতা অরুণ কুমার, সংগঠনের দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত প্রচারক প্রশান্ত ভট্ট, ক্ষেত্র প্রচারক রমাপদ পাল। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা এই বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিজেপির দিক থেকে সমন্বয় বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তী, দিলীপ ঘোষ, মঙ্গল পাণ্ডেরা তো থাকবেন।
কিন্তু জ্যোতির্ময়ের বৈঠকে ডাক পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের। শুভেন্দু অধিকারীর মতো হাই-প্রোফাইল নেতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ওখানে। এর পিছনে নিশ্চয়ই আরএসএসের কোনও ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে।’ তবে বিজেপির অন্য একটি অংশের মতে, যে যুক্তিতে জ্যোতির্ময়ের ‘সমন্বয়’ বৈঠকে ডাক পাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ, একই যুক্তিতে দিলীপ ঘোষের নাম নিয়েও চর্চা হওয়া উচিত।
কারণ, দিলীপ বর্তমানে রাজ্য বিজেপির কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। এরপরেও আরএসএস তাঁকে সমন্বয় বৈঠকে ডেকেছিল। এর থেকে স্পষ্ট, বঙ্গ-বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে এখনও দিলীপকে বিবেচনা করে সঙ্ঘ।