• আরও বিপদে সন্দীপ, আর্থিক দুর্নীতির তদন্তও এ বার CBI-এর হাতে
    এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীনই ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার শুক্রবার সিবিআইয়ের হাতেই তুলে দিল হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চ। ফলে আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলার পাশাপাশি এই আর্থিক দুর্নীতিরও তদন্ত করবে সিবিআই।গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনার পরে নতুন করে সামনে আসে আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি। এই দুর্নীতির বিষয়ে তরুণী চিকিৎসক কিছু জেনে ফেলেছিলেন বলেই পরিকল্পনামাফিক তাঁকে ধর্ষণ-খুন করা হয়েছে কি না— তেমন সন্দেহও দানা বাঁধে বিভিন্ন মহলে। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ চালাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের এ দিনের নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত আইনজ্ঞদের একাংশের।

    এই আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের জন্য গত ১৬ অগস্ট একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে রাজ্য সরকার। বিচারপতি ভরদ্বাজের নির্দেশ, আজ, শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে এই মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে সিটকে।

    বিচারপতি রায়ে বলেছেন, ‘যেহেতু এক্ষেত্রে একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এবং একাধিক এজেন্সি যদি একই ঘটনার বিভিন্ন অংশ নিয়ে তদন্ত করে, তাহলে ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে এবং বিচার প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হতে পারে। তাতে উপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপেও সমস্যা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এজেন্সির খণ্ডিত তদন্ত এড়িয়ে একটিই এজেন্সির হাতে এই মামলার তদন্তভার থাকা উচিত।’

    যেহেতু সিবিআই ধর্ষণ-খুন মামলায় তদন্ত চালাচ্ছে এবং এর পিছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিভিন্ন মহল এই আর্থিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলছেন, তাই তারাই এই তদন্ত করলেই ভালো হবে বলে মনে করেছে আদালত। এই তদন্তও যে আদালতের নজরদারিতে চলবে, তা-ও এদিন বুঝিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট। এই তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট সিবিআইকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে হাইকোর্টে।

    এ দিন দুপুরে সিঙ্গল বেঞ্চ এই রায় দেওয়ার পরেই তা চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী। কিন্তু রায়ের কপি না দেখে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা শুনতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ সন্দীপের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতির রেগুলার বেঞ্চে আবেদন করতে বলা হয়। যেহেতু এক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠছে, তাই আগামী দিন আর এক কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি-রও এই তদন্তে ঢুকে পড়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের বড় অংশ।

    গত বছর সন্দীপের বিরুদ্ধে ওই হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি একগুচ্ছ অভিযোগ তোলেন। তারমধ্যে মর্গের মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতি, টেন্ডার দুর্নীতি, হাসপাতাল চত্বরে বেআইনি পার্কিং কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে হাসপাতালের বর্জ্য বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার মতো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকী রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেও মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেখান থেকেও তলব করা হয় প্রাক্তন অধ্যক্ষকে।

    কিন্তু টালা থানা ও রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনে আখতার আলি অভিযোগ করলেও তা নিয়ে তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে আদালতে উল্লেখ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। সেই মামলায় বিচারপতি ভরদ্বাজ বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তোলেন, দেড় বছর আগে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল পুলিশের কাছে, অথচ ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে রাজ্য সেই অভিযোগের তদন্তে সিট গঠন করল কেন? ইতিমধ্যে ৯ অগস্টের ঘটনায় হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। এই অবস্থায় দু’টি ঘটনার তদন্ত একই এজেন্সির হাতে থাকা উচিত বলে মনে করে আদালত।

    হাইকোর্ট অবশ্য এই মামলার আবেদনকারী আখতার আলির নিরাপত্তার আবেদনে সাড়া দেয়নি। নথি দেখে আদালতের বক্তব্য, গত বছর তিনি এই দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার পরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে তিনি এখন নিরাপত্তা পেতে পারেন না। প্রয়োজনে আগামী দিনে তিনি নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে আবেদন করতে পারবেন।

    তাঁর আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই ও ইডিকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে এবার ইডিও তদন্ত শুরু করতে পারবে।’
  • Link to this news (এই সময়)