মৃত ভারতীয় ভাইকে বর্ডারে এসে বিদায় বাংলাদেশি দিদির
এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
এই সময়, কৃষ্ণনগর: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির মাঝেও দু’দেশের সীমান্তে উজ্জ্বল হয়ে রইল মানবিকতা। নদিয়ার মাটিয়ারি সীমান্তে মৃত ভারতীয় ভাইয়ের মুখ শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশি দিদি। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সব শুনে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।
অসুস্থতার কারণে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাটিয়ারি মাঠপাড়ার বাসিন্দা শরিফুল মণ্ডলের (৩৫) মৃত্যু হয়েছিল গত বুধবার। ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নদিয়ার সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের গ্রামের বাসিন্দা দিদি রেকসানা বিবি। মৃত ভাইয়ের মুখ শেষ বারের মতো দেখতে চাইছিলেন তিনি।মৃত্যুর আগে দিদির সঙ্গে একবারটি দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ভাইও। মৃতের পরিবারের আর্জিতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের পদস্থদের সঙ্গে কথা বলে বিএসএফ। সে দিন দুপুরেই মৃতদেহ জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়ে ওপারের আত্মীয়দেরকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। রেকসানা বিবি শেষ দেখা দেখেন ভাইকে।
মৃত যুবকের পিসতুতো ভাই ইলাউল শেখ বলেন, ‘শরিফুল রাজমিস্ত্রির কাজ করত। কখনও সেন্টারিং মিস্ত্রির কাজে ভিন রাজ্যেও যেত। লিভারের রোগে ভুগছিল। বুধবার ভোরে মারা যায়। ওর বড়দির বাড়ি আমাদের গ্রামের সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের জীবননগর থানার গোয়ালপাড়া গ্রামে। ফোনে ভাইয়ের অকালমৃত্যুর খবর পেয়ে দিদি বারবার বলতে থাকে, কোনও ভাবে যদি শেষ বারের মতো ভাইয়ের মুখ দেখতে পায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে আমরা বিএসএফের ৩২ ব্যাটেলিয়নের স্থানীয় সীমান্ত চৌকির পদস্থদের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছিলাম। এর আগে গ্রামের কেউ মারা গেলে ওপার বাংলার আত্মীয় থাকলে পরিবারের অনুরোধে সেই মৃতদেহ দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন বিএসএফের পদস্থরা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ মিলবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। কিন্তু আগের মতোই মানবিক মুখ দেখিয়ে বিএসএফের পদস্থরা সে সুযোগ করে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মাটিয়ারি-বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরেও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা একই ভাবে মানবিক মুখ দেখিয়ে চলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার বিষয়।’
গত ১৮ মার্চ এই গ্রামেরই বাগানপাড়ার বাসিন্দা নবতিপর বৃদ্ধা সাকিনা বেওয়ার মৃত্যু হলে মৃতের পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে সে দিনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিএসএফ। সংলগ্ন ওপার বাংলার গ্রামে থাকা বৃদ্ধার তিন মেয়েকে মায়ের মুখ শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।