জাস্টিস চেয়ে রাস্তায় কি যৌন হেনস্থায় অভিযুক্তরাও? এ বার উঠছে প্রশ্ন
এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এখন মানুষের মুখে মুখে। আরজি করের ঘটনার পর থেকে রোজই একাধিক প্রতিবাদী মিছিলের সাক্ষী থাকছেন রাজ্যবাসী। কিন্তু প্রতিবাদীদের মধ্যেও কি লুকিয়ে থাকছেন অতীতে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত একাধিক ব্যক্তি? প্রতিবাদীদের মধ্যে থেকেই কিন্তু সেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।অতীতের অফেন্ডারদের মিছিল-মিটিংয়ে দেখে অনেকে সেখান থেকে ফিরেও আসছেন। কেউ কেউ প্রতিবাদীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করছেন। যদিও আন্দোলনরত প্রতিবাদীরা খেয়াল রাখছেন, যাতে এমন অফেন্ডারদের এই জাস্টিসের আন্দোলন থেকে বাইরে রাখা যায়।
আশুতোষ কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্রী বলেন, ‘দিন কয়েক আগে আমি অ্যাকাডেমির সামনে একটি জমায়েতে গিয়েছিলাম। আরও অনেকের সঙ্গে সেখানে ছিল আমাদের কলেজের এক সিনিয়র। ইউনিয়ন রুমে একা পেয়ে যে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সে এতটাই প্রভাবশালী। ওই দিন দেখলাম সেও জাস্টিসের দাবি তুলছে!’
জমায়েতে ওই ব্যক্তিকে দেখে এই প্রাক্তনীর শরীর এতটাই খারাপ লাগতে শুরু করে যে তিনি মাঝপথেই বেরিয়ে আসেন। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা এর প্রতিবাদে শুক্রবার রাস্তায় নামেন। এই আন্দোলন সংগঠিত করতে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল। এক প্রাক্তন ছাত্র সেখানে লেখেন, ‘এই গ্রুপে এমন এক জন আছেন, যিনি কলেজে পড়ার সময়ে মেয়েদের রেপ থ্রেট দিতেন। তিনিও দেখছি জাস্টিস চাইছেন। অ্যাবিউজ়ারদের সঙ্গে নিয়ে এই লড়াইয়ে থাকা সম্ভব নয়।’ তিনি ওই গ্রুপ লিভ করেন।
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই একাধিক মিছিল, প্রতিবাদসভার সাক্ষী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দলে দলে পথে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। রয়েছেন প্রাক্তনীরাও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, গত বছর র্যাগিং ও যৌন হেনস্থায় এক ছাত্রের মৃত্যুতে অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কেউ এবং তাঁদের আড়াল করা অনেকে আরজি কর নিয়ে আন্দোলনে সরব হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অরণী ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা সচেতন রয়েছি। এই আন্দোলনের মধ্যে কোনও অফেন্ডার বা তাদের কোনও আশ্রয়দাতা যাতে ঢুকে পড়তে না পারে সেটা নজরে রাখা হচ্ছে।’ দশ বছর আগে যাদবপুরের হোক কলরব আন্দোলন শুরু হয়েছিল ক্যাম্পাসে এক ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুকে যৌন হেনস্থা এবং মারধরের অভিযোগ সামনে রেখে। সে সময়েও যাঁরা নিগ্রহকারীদের বাঁচিয়েছিলেন, তাঁরাও এ বার আন্দোলনে! সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে সরব হয়েছেন।
হোক কলরব আন্দোলনের পরিচিত মুখ এবং যাদবপুরেরই প্রাক্তনী অরুমিতা মিত্রর বক্তব্য, ‘এই সব হেনস্থাকারীদের ও তাদের আশ্রয়দাতাদের পোস্ট, মিছিলের ছবি দেখছি। হাসি পাচ্ছে, রাগও হচ্ছে। এরাই তখন একটি মেয়ের বিচারের পথে বাধা হয়েছিল। নির্যাতিতাকেই নানা ভাবে হেনস্থা করেছিল!’
এই সব দেখেশুনে পেশায় আইনজীবী এবং চলতি আন্দোলনের অন্যতম মুখ অণ্বেষা কুণ্ডু লিখেছেন, ‘এই প্রতিবাদ মিছিলে আসার আগে একটা বার অন্তত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কোনও দিন কারওর ট্রমার কারণ হননি তো? কাউকে যৌন হেনস্থা করেননি তো? নইলে কোনও দিন দেখব পোস্টারে লেখা আছে, অ্যাবিউজ়াররা দিচ্ছে ডাক তিলোত্তমা বিচার পাক!’