• নিতুড়িয়ার গ্রন্থাগার ভগ্নপ্রায়, কোনওমতে কাজ চলে গাছতলায়
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: নিতুড়িয়া ব্লকের বোড়া গ্রামের ‘বোড়া বাণী সাহিত্য মন্দির’ গ্রন্থাগার ভবনটি ভেঙে পড়েছে। গ্রন্থাগারের বইগুলি বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। যে কোনও সময়ে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। আতঙ্কে গাছের তলায় কাজ সারছেন গ্রন্থাগারিক। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রন্থাগারটি বেহাল অবস্থায় থাকলেও সরকারের তরফ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গ্রন্থাগারের সংস্কারের দাবিতে গ্রামের বাসিন্দারা জেলার সমস্ত দপ্তরের অভিযোগ জানিয়েছেন। কবে আবার গ্রন্থাগারটি পাঠকদের উপযোগী হয়ে উঠবে সেই দিকে তাকিয়ে সকলে। 

    পুরুলিয়া জেলা গ্রন্থাগারিক সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, বোড়া গ্রামের গ্রন্থাগারটির বেহাল অবস্থার কথা জানার পরেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছি। খুব দ্রুত গ্রন্থাগারটি আবার পাঠকদের উপযোগী হয়ে উঠবে।

    জানা গিয়েছে, সংস্কৃতি ভাবাপন্ন বোড়া গ্রামের বাসিন্দাদের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৫২ সালে বাণী পাঠাগারটি গড়ে ওঠে। আশির দশকে গ্রন্থাগারটি সরকারি স্বীকৃতি পাই। গ্রামের মানুষের দান করা জমির উপর গ্রন্থাগারের ভবন গড়ে ওঠে। একসময় গ্রন্থাগারে পাঠকদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সেই সময়ে গ্রামের যুবক যুবতীরা চাকরির পরীক্ষার জন্য গ্রন্থাগার থেকে বই সংগ্রহ করতেন। সেই বই পড়ে গ্রামের প্রচুর যুবক যুবতী এখন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি করছেন। যুবক, যুবতীদের পাশাপাশি গ্রামের প্রৌঢ়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও গ্রন্থাগারে গিয়ে নিয়মিত বই পড়তেন। কিন্তু বর্তমানে গ্রন্থাগারের বেহাল অবস্থার জন্য সেই সোনালী দিন চলে গিয়েছে।

    গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি বই ছাড়াও নাটক, গল্প, উপন্যাস সহ বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। মোট সাত হাজার বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত ৩০০ পাঠক রয়েছে। তবে বর্তমানে সমস্ত বই বস্তাবন্দি করে রাখা রয়েছে। গ্রন্থাগারিক স্বপনকুমার মণ্ডল বলেন, বর্তমানে গ্রন্থাগারের ভবনটি একেবারে ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ কেটে দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থাগারের বইগুলি যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য বস্তাবন্দি করে একটু ভালো একটি ঘরে রাখা হয়েছে। গ্রন্থাগারে এখন কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কারণ যে কোনও সময় ছাদ ভেঙে পড়ে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তাই কেউ বই চাইতে এলে তাকে আমরা কষ্ট করে বই দিয়ে দিই। বসার কোনও ঘর নেই। তাই গাছতলাতে বসে কাজ চালাই।

    গ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট মানিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, সারাদিন বসে বসে বোর হয়ে যাই। ভালো লাগে না। আগে পাঠকরা আসতেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সময় কেটে যেত। ২০১৪ সাল থেকে গ্রন্থাগারটি বেহাল হয়ে পড়েছে। দু’ বছর হল পুরোপুরি পরিত্যক্ত। 

    গ্রামের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় মাজি, সৌরভ প্রকাশ মাজি, উত্তম মাজি বলেন, গ্রামের মানুষদের প্রচেষ্টায় গ্রন্থাগারটি গড়ে উঠেছে। গ্রন্থাগার করার জন্য জমি দানপত্র করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামের মানুষের সম্পদ গ্রন্থাগারটি চোখের সামনে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রন্থাগারের ভবনটি নতুন করে করার জন্য জেলার সমস্ত দপ্তর, মন্ত্রী সকলকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

    নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদব বলেন, গ্রন্থাগারটি সংস্কারের জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু জমিটি দানপত্র হলেও গ্রন্থাগারের নামে না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে আর কাজ হয়নি। তবে গ্রন্থাগারটি নতুন করে কীভাবে করা সম্ভব হয় তা জেলার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)