• যোগ্য উপভোক্তাদের বদলে সরকারি ঘর পাচ্ছে অযোগ্যরা, অভিযোগ বিজেপির
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে হাউজিং ফর অল প্রকল্পে উপভোক্তার নামে বাড়ির অনুমোদন এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই উপভোক্তার বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে উপভোক্তার সেই বাড়ি চলে গিয়েছে অন্যজনের নামে। অথচ খাতায়কলমে দেখা যাচ্ছে যোগ্য উপভোক্তার বাড়িই নাকি তৈরি হচ্ছে। কৃষ্ণনগর পুরসভায় আবাস দুর্নীতির এই বিষয়টি সামনে আসতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে কৃষ্ণনগর পুরসভার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। নদীয়া উত্তরের বিজেপি যুব মোর্চার তরফ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে।‌ শুধু তাই নয়, উপভোক্তাদের তালিকাও অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়েছে।‌ সরকারি প্রকল্পে বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যোগ্য উপভোক্তাদের। নদীয়ার জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’

    কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাস বলেন, এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই ধরনের ভুয়ো অভিযোগ তোলা হচ্ছে। নিয়ম মেনেই আবাস যোজনায় যোগ্য উপভোক্তারা ঘর পাচ্ছেন। 

    অভিযোগ, পোর্টালে নাম থাকার সত্ত্বেও ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যোগ্য উপভোক্তারা। কিন্তু যে ব্যক্তির নামে ঘর নেই, তাঁর ঘর তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। অর্থাৎ যোগ্য উপভোক্তাদের ঘর অযোগ্যদের নামে করা হচ্ছে। কিন্তু খাতায়কলমে দেখানো হচ্ছে প্রকৃত উপভোক্তাই নাকি ঘর পেয়েছেন। এমনকী প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ যোগ্য ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে বেনামী কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে। অভিযোগপত্রে এরকম বেশকিছু যোগ্য উপভোক্তার তালিকাও তুলে ধরা হয়েছে।‌

    শহরের মালিপাড়ার এক যোগ্য উপভোক্তা, দীপা দাস বলেন, আমরা ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের নামে ঘর এসেছিল। সেইমতো আমরা পুরনো ঘরের একাংশ ভেঙেছিলাম। তারপর পুরসভায় গিয়ে জানতে পারি আমার স্বামীর গোপাল দাসের নামে নাকি ঘর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আদতে আমাদের ঘর তৈরি হয়নি। 

    অভিযোগকারী বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রাজু দাস বলেন, যোগ্য উপভোক্তারা ঘর পাচ্ছেন না‌। তার পরিবর্তে অন্যরা ঘর পাচ্ছেন। এটা একটা বড়সড় দুর্নীতি। আমি জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। এরকম বেশ কিছুজনের নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা আছে। 

    কৃষ্ণনগর পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের হাউসিং ফর অল প্রকল্পের টাকা এখনও পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষ অনুযায়ী শহরের ১০৭৯ জন উপভোক্তার এই প্রকল্পের আওতায় বাড়ি তৈরির টাকা পাওয়ার কথা। যার মধ্যে ১০২৪টি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু টাকা আসতে দেরি হওয়ায় সেই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করা যায়নি। সব মিলিয়ে কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ৩৭ কোটি টাকা। সেই মতো বিগত তিন বছর ধরে দফায় দফায় টাকা আসছে।‌

    জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর পুরসভাকে প্রথম দফায় ৩৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পায় কৃষ্ণনগর পুরসভা। তৃতীয় দফায় আসে ৫ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। চতুর্থ দফায় পাঠানো হয় ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। পঞ্চম দফায় তিন কোটি টাকা ও ষষ্ঠ দফায় ৯ কোটি টাকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ২৩ কোটি টাকা পেয়েছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। সময়মতো টাকা না আসার ফলে বাড়ির কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুরসভাকে।
  • Link to this news (বর্তমান)