• তৈরি হয় দশভুজার প্রতিমা, পুজো আসতেই ভাগীরথীর পাড়ে মাটি মাফিয়াদের রমরমা
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বহরমপুর: ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত। প্রতিমার গায়ে মাটি চাপানো শুরু হতেই ভাগীরথীর দু’ পাড় মাটি মাফিয়াদের দখলে চলে এসেছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অবাধে চলছে বেআইনি মাটি তোলা। ভাগীরথীর পাড় কেটে বস্তা বস্তা মাটি রোজ চোরাপথে বিক্রি হচ্ছে। ভাগীরথী পাড়ের চোরাই ঘাটগুলি তিন-চারজন করে মাটি মাফিয়া দখল নিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনের তাগিদে মৃৎশিল্পীদের মাটি মাফিয়াদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। মৃৎশিল্পীদের দাবি, অবৈধ মাটি কিনে ঘরে আনতে গিয়ে আবার রাস্তায় পুলিসকে টাকা দিতে হয়। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তেই হু হু করে গঙ্গামাটির দাম বাড়তে শুরু করে। সবটাই নিয়ন্ত্রণ করছে এক শ্রেণির অসাধু মাটি মাফিয়া।

    প্রতিমায় খড় বাঁধার পর প্রথমে এঁটেল মাটি সঙ্গে খড়ের বিচালি, পাটের কুচি, তুষ দিয়ে পাকিয়ে প্রতিমা একমাটি করা হয়। তা শুকোলেই প্রতিমার গায়ে বড় বড় ফাটল হয়। প্রতিমা মসৃণ করতে দু’ মাটি করা হয়। দু’ মাটিতে গঙ্গার সাদা মাটিই ব্যবহার করা হয়। গঙ্গার সাদা মাটিতে সুক্ষ্ম বালুকণা এবং পলি থাকায় প্রতিমার গায়ে মসৃণতা ফিরে আসে। প্রতিমা তৈরির আগে মৃৎশিল্পীরা গঙ্গার মাটি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। পুজোর দু’ মাস আগে থেকে গঙ্গা মাটির চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

    প্রতিমা শিল্পী নারায়ণ পাল বলেন, যে কোনও প্রতিমা তৈরিতে গঙ্গামাটির কোনও বিকল্প নেই। গঙ্গামাটির প্রলেপের উপর রং অনেক ভালো খেলে। একমাটির সময়ে জমির মাটি ব্যবহার করলেও দু’মাটির সময় গঙ্গার মাটিই ব্যবহার করা হয়। বহরমপুর শহর সংলগ্ন বিভিন্ন ঘাট, গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে রাঘারঘাট, নিয়াল্লিশপাড়া, আধারমানিক থেকে শুরু করে শক্তিপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মাটি মাফিয়ারা গঙ্গার পাড় কেটে বস্তা বস্তা মাটি বিক্রির জন্য জমা করে রেখেছে। প্রতি বস্থায় এক ঝুড়ি করে (আনুমানিক ২৫ কেজি) মাটি থাকে। এক বস্তা মাটির দাম ৭০-৮০ টাকা। মৃৎশিল্পীদের দাবি, দামাদামির কোনও সুযোগ নেই। যে দাম ঠিক করে রাখে সেই দামেই কিনতে হয়। বৈধভাবে নিতে গেলে বস্তা প্রতি একশো টাকা গুনতে হবে। বাজারশৌ এলাকা থেকে লছিমন ভ্যানে চল্লিশ বস্তা মাটি চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কান্দি এলাকার এক প্রতিমা শিল্পী। শিল্পী জানালেন, কান্দি পর্যন্ত এই মাটি নিয়ে যেতে রাস্তায় দু’ জায়গায় একশো টাকা করে দিতে হবে। আমরা নিরুপায়। প্রতিমার বরাত নিয়েছি। সব হ্যাপাই সামলাতে হবে। প্রতিমা শিল্পীদের অভিযোগ, এই কারবার বছর বছর ধরে চলে আসছে। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকেই গঙ্গাপাড় মাটি মাফিয়াদের হাতে চলে যায়। কালীপুজো পর্যন্ত মাটি মাফিয়াদের রাজ কায়েম থাকে।
  • Link to this news (বর্তমান)