নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ধর্ষণ-খুনের তদন্ত কি গৌণ হয়ে যাচ্ছে? সামনের সারিতে স্থান করে নিচ্ছেন শুধুই সন্দীপ ঘোষ? তদন্তকারী অফিসাররা লাগাতার তথ্য-প্রমাণ লোপাটের তত্ত্বে মনোযোগ দেওয়ায় এই প্রশ্ন উঠছে। আর তার রেশ পৌঁছচ্ছে খাস দিল্লিতেও। সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্তারাই এই প্রবণতায় রীতিমতো অস্বস্তিতে। তাঁরা সাফ বুঝতে পারছেন, অন্য মামলাগুলির সঙ্গে এই মর্মান্তিক ঘটনাটিকে এক করে ফেলা চলবে না। তাই অন্য কেউ যদি ৯ আগস্ট সেমিনার রুমে উপস্থিত থেকে থাকে, তার ব্যাপারে ব্রেক-থ্রু অবিলম্বে প্রয়োজন। না হলে আন্দোলনের অভিমুখ সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সের দিকে ঘুরতে বেশি সময় লাগবে না। এই পাহাড়প্রমাণ চাপের মধ্যেই নতুন ‘বোঝা’ চেপেছে সিবিআইয়ের কাঁধে—সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত। অর্থাৎ, একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। সন্দীপের আমলে আর জি করে আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি মৃতদেহ এবং বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য পাচার ও তোলাবাজির অভিযোগের তদন্তে ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের নির্দেশ, আজ, শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করবে সিট। তিন সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে একটি স্টেটাস রিপোর্টও জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আর জি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে গোটা দেশ তোলপাড়। তার মধ্যেই সন্দীপের বিরুদ্ধে অর্থিক দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগে ইডি ও সিবিআই তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। এদিন সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের পর্যবেক্ষণ, ‘একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে বিষয়টি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তাই মূল ঘটনার সঙ্গে ওই হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তও করবে সিবিআই।’ এই রায় ঘোষণা মাত্রই অবশ্য তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু তাঁকে সিঙ্গল বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়েছে আদালত। অর্থাৎ, আর জি করের সব সূত্রই এখন সিবিআইয়ের হাতে। এমনিতেই কলকাতা পুলিস যাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করেছিল, সেই সঞ্জয় ছাড়া আর কোনও অগ্রগতি নেই এজেন্সির হাতে। দিল্লির সিবিআই কর্তাদের উদ্বেগের কারণ, ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ঘটনায় যদি অগ্রগতি দেখানো না যায়, নিশ্চিতভাবে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হবে। তাতে চাপে পড়বে কেন্দ্রীয় সরকারও। তাই তদন্তকারীদের বলা হচ্ছে, তদন্তের স্টেটাস ফুলপ্রুফ হওয়া চাই। সমস্যা কোথায়? অন্য কেউ ধর্ষণ-খুনে জড়িত থাকতে পারে বলে সিবিআই দাবি করলেও, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ তারা অবশ্য এখনও দাখিল করেনি। এরই মধ্যে শুক্রবার সঞ্জয়ের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি জেরাপর্ব শেষ? নতুন কী জানতে পারল সিবিআই? তাহলে কি তদন্তের অভিমুখ পুরোটাই সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতির দিকে সরে গেল? এবার লক্ষ্য কী? স্বাস্থ্যদপ্তর? আর সেইসঙ্গে এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে চেনা প্রেশার পলিটিক্স।