• ‘শুধু রাজনীতি, রাজায় রাজায় যুদ্ধে রোগীরা প্রাণ কেন দেবে’
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অনেক হয়েছে! এবার হাসপাতালের দখল নিচ্ছেন রোগীরা। অবস্থান মঞ্চের মাইকের আওয়াজ মাঝে মধ্যে ঢেকে যাচ্ছে স্ট্রেচারের ঘড়ঘড় শব্দ, কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে। শুক্রবার আর জি কর হাসপাতালে ১১০০’র বেশি রোগী ওপিডিতে দেখিয়েছেন, খবর এমনটাই। গত সপ্তাহে ঝামেলার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেননি নিউটাউনের শেখ হুসেন আলি। বাইরে থেকেই ইনসুলিন আর সুগারের ওষুধ কিনেছিলেন। একবার কষ্ট করে কিনেছেন, বারবার তো সম্ভব নয়। বলছিলেন, ‘ডাক্তার দেখেছে। ওষুধ এখান থেকেই নিতে পেরেছি।’ তারপরেই বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘গোটাটা রাজনীতি... বুঝলেন? মেয়েটার জন্য বিচার দরকার। এখানেও রাজনীতি। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, আর আমাদের প্রাণ যাচ্ছে।’

    বেলা বাড়তেই তুমুল বৃষ্টি। না হলে হয়তো মরিয়া হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ত। ওপিডির সামনের রাস্তায় ভালো রকম জল জমেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও ভারী জুতো হাতে নিয়ে জল পেরচ্ছিলেন। নিউটাউনের ওই বাসিন্দাও সেই পথে জল পেরিয়ে ওপিডিতে এসেছেন। ডাক্তার যে দেখাতে পেরেছেন, এতেই খুশি। ওপিডিতে এদিন যাঁরাই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের। সকলেরই বক্তব্য, ‘কতদিন বাইরে থেকে ওষুধ কিনব?’ হাতে প্লাস্টার বেঁধে এসেছিলেন আসাদুল হক। তারিখ হিসেব কষে বললেন, ‘১৪ তারিখ আসতে বলেছিল। সেদিন ঝামেলার খবর পেয়ে আসিনি। তারপর ২১ তারিখ এলাম। ফিরে গেলাম। আজ অবশেষে ডাক্তার দেখেছেন।’ আসাদুল বলছিলেন, ‘যা হয়েছে, মর্মান্তিক। দোষীদের শাস্তি দরকার। কিন্তু আমরা পরিষেবা না পেলে কোথায় যাব বলতে পারেন? আমাদের তো বেসরকারি জায়গায় দেখানোর ক্ষমতাও নেই।’ বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে বেরলেন বসিরহাটের স্বদেশ বিশ্বাস। বললেন, ‘বাবার কিডনির সমস্যা। আমাদের আজকেই তারিখ ছিল। ডাক্তার দেখেছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগে ডাক্তারবাবুর সংখ্যা কম। আমার মনে হয়, দোষীদের শাস্তি পাওয়া দরকার। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তো মানুষ মরে যাবে!’ এদিন যাঁরা আর জি কর হাসপাতালের ওপিডিতে এসেছিলেন, সকলেই ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন। অনেক রোগীই বলছিলেন, ‘এখন যে ওপিডিতে এলে ডাক্তারবাবুরা দেখছেন, সেকথা সকলকে গিয়ে জানাতে হবে। অনেকেই কাজ হবে না ভেবে হাসপাতালে আসছেন না।’

    ভাঙচুরের পর আর জি করের জরুরি বিভাগ এখন ট্রমা কেয়ারে। সেখানেও বহু রোগী এসেছিলেন এদিন। তাঁরা চিকিত্সাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অনেকেই ভুলবশত প্রথমে ভাঙচুর হওয়া জরুরি বিভাগে চলে যান। এই যাতায়াতের পথেই অবস্থান মঞ্চে জন্মদিন পালন হল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ রাধাগোবিন্দ করের। বলা হল মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর স্ট্রাগল, আদর্শের কথাও... পরিষেবা নয়, সেবা। আর সবটাই গরিব মানুষের জন্য। সেই আদর্শে কবে ফিরবে কলকাতার হাসপাতাল? অপেক্ষায় আম জনতা। 
  • Link to this news (বর্তমান)