• আর রোগীর ক্ষতি নয়, নিজের ছন্দে ফিরে আসুক হাসপাতালরাজীব গঙ্গোপাধ্যায়
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • আর জি কর কাণ্ডে কে দোষী বা বিচারব্যবস্থায় কার কী শাস্তি হবে এটা জানতে গেলে আমাদের সকলকেই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এটি বিচারবিভাগীয় বিষয়। ধর্ষণ ও এমন নারকীয় খুনের মতো ঘটনা শুনলে প্রথমেই মনে হয়, বাড়ির শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা পরিবেশের কথা। আমরা আগেও নানা সময়ে ধর্ষকের ফাঁসি দেখেছি, এমনকী, দিল্লির ‘নির্ভয়া’-র ঘটনাতেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাতেও এই ধরনের ঘটনা কিন্তু কমেনি। আর জি কর-এ যা ঘটল, তার মূলে রয়েছে মেয়েদের পণ্য ভাবা ও তাঁদের প্রতি অসম্মানজনক মনোভাব। গোড়া থেকেই একটি শিশু হয়তো দেখে আসছে বাবা ও মায়ের মধ্যে নানা সমস্যা। দেখছে বাবা সহ বাড়ির সকলে ঠাকুরমা বা মায়ের উপর মানসিক ও শারীরিক পীড়ন চালায়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুটি ধরে নেয়, বাড়িতে মা কিংবা ঠাকুরমার কথা বা আচরণের কোনও দাম নেই। সেও ছোট থেকেই মেয়েদের হেয় করতে শিখবে। ভবিষ্যতের নানা কাজে তার সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটবে। আইন করে বা কঠোরতম শাস্তি দিয়ে এই অন্যায় প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এই ঘটনা নিয়ে মিছিল ও আন্দোলন চলছে, তা খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এঁদের মধ্যেও এমন কেউ কেউ আছেন যাঁরা হয়তো অতীতে কোনও না কোনও নারীকে নিগ্রহ করেছেন বা পারিবারিক ক্ষেত্রে নিজের স্ত্রী-বোন বা মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এমন দ্বিচারিতাও খুব দুশ্চিন্তার। এক্ষেত্রে মেয়েদেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। পারিবারিক ক্ষেত্রে অবিচার বা নিগ্রহ হলে তা মেনে না নিয়ে তাঁদেরও ঘুরে দাঁড়ানো উচিত। প্রতিবাদ করা উচিত। তাঁরা রুখে দাঁড়ালেই সমাজ বদলাবে। 

    আমার বাবার ঠাকুরমা ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক। সমাজের মুষ্টিমেয় শ্রেণি তাঁকেও নানাভাবে কোণঠাসা করেছে, একঘরে করেছে। আবার এও ঠিক, সমাজের সকলে তাঁকে ঘৃণা করেননি, দূরে ঠেলে দেননি। আজও বহু মেয়ে নাইট ডিউটি করেন, রাতবিরেতে বাড়ি ফেরেন, তাঁরা সকলেই বিপদের মুখে পড়ছেন এমন তো নয়! 

    আমি বিশ্বাস করি, সমাজে এখনও ভালোমানুষ রয়েছেন, সকলেই খারাপ নন। চিকিৎসকরাও প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে নেমেছেন। তাঁদের সুরক্ষার দাবি খুবই ন্যায্য। কিন্তু তার সঙ্গে পরিষেবা বন্ধ রেখেও কিন্তু কোনও সুরাহা হবে না। বরং তাতে মারণ অসুখের কিছু রোগীর ক্ষতি হচ্ছে। কাদম্বিনীদেবী কিন্তু শত সামাজিক লাঞ্ছনার পরেও নিজের প্র্যাকটিস ও পরিষেবা বন্ধ করে দেননি। এমনকী স্বামীর দাহকার্য শেষ হওয়ার আগেই সন্তানসম্ভবাকে দেখতে গিয়েছিলেন। কাজেই বিচার, প্রতিবাদ সবকিছুর সঙ্গে মানসিকতা বদলের পাঠও শুরু হোক। হাসপাতাল ফিরুক নিজস্ব ছন্দে।
  • Link to this news (বর্তমান)