অভিষেক পাল, জলঙ্গি: বর্ষার অঝোর ধারায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে নদী। রাতের দিকে জোয়ারের সময় নদীর খরস্রোত ভারতের অভিমুখে। আর সেই সুযোগে কলার ভেলায় কচুরিপানা সাজিয়ে তার নীচে ইলিশের পেটি বেঁধে দিচ্ছে পাচারকারীরা। জলের স্রোতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে ভারতে মুর্শিদাবাদের পাড়ে চলে আসছে কেজি কেজি ইলিশ। স্রোতের গতিপথকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই কোনও ক্যারিয়ার ছাড়াই ইলিশ পাচার করছে ওপারের দুষ্কৃতীরা। বিনিময়ে মোটা টাকার মুনাফা করছে তারা। মুর্শিদাবাদের স্থানীয় বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পদ্মার খাঁটি ইলিশ।
বর্ষার মরশুমে সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে এভাবেই চলছে ইলিশ পাচার। এক-একটি মাছের জন্য বাংলাদেশের কারবারিকে গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। সেই মাছ দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে এপারের বাজারের মাছ বিক্রেতারা। এদিকে ভারতীয় মুদ্রায় মাছের দাম হাজার টাকা হওয়ায় বাংলাদেশের টাকায় প্রচুর মুনাফা হয় পাচারকারীদের। অনেক সময় ইলিশের বিনিময়ে এপার থেকে চিনি, লঙ্কা ও গোরু পাচার করা হয়। এক পেটি মাছের বিনিময়ে পাচারকারীরা একটি করে গোরু পাচার করে দেয় বলেও জানাচ্ছেন সীমান্তের গ্রামবাসীরা। তবে সবটাই চলে বর্ষার রাতে। যাতে বিএসএফের নজরদারি থেকে তারা রক্ষা পায়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের স্পষ্ট ইঙ্গিত, এবার ভারতে পাঠানো হবে না ইলিশ। উপদেষ্টার এই ঘোষণায় বাংলাদেশিরা উদ্বাহু নৃত্য শুরু করলেও, সে দেশের পাচারকারীরা তাতে ভ্রুক্ষেপ করছে না। তাদের বক্তব্য, স্থানীয় বাজারে এত দামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে না। তাই চোরাপথেই পাঠাতে হচ্ছে ভারতে।
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের জেরে অরাজকতা তৈরি হওয়ায় সেইসময় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা ব্যাপক তৎপর হয়। বেড়ে যায় জলপথের নজরদারিও। ফলে পাচার কাজ কিছুটা থমকে গিয়েছিল। অতিবৃষ্টির জেরে বন্যায় দিশেহারা বাংলাদেশ। জলপথের নজরদারিও কিছুটা শিথিল হয়েছে। আর সেই সুযোগেই ফের ইলিশ পাচার শুরু হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে, জলঙ্গি সীমান্তে নদীতে টহল দেওয়ার সময় বিএসএফ কলার ভেলা থেকে থেকে প্রচুর ইলিশ উদ্ধার করে। পাশপাশি উদ্ধার হয় গোরু ও মোষ। স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল জামান বলেন, সাধারণত রাতের দিকে নদীর স্রোত ভারতের দিকে থাকে। সেই সময় অন্ধকারে অনেকেই ভেলার নীচে ইলিশের প্যাকেট বেঁধে পাঠিয়ে দেয় মাছ বাজারের কাছেই। সেই স্রোতের ধাক্কায় ইলিশের প্যাকেট সোজা এপারে। প্যাকেট পৌঁছে যায় এপারের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে। ওই মাছ বাজারে বিপুল দামে বিক্রি হচ্ছে।
জলঙ্গি বাজারের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, পদ্মার ইলিশের দাম সবসময় একটু বেশি। একেবারে টাটকা ইলিশের দাম ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা। মাছগুলির ওজন ১১০০ থেকে ১২০০ গ্রাম। ওপার থেকে আসছে বলেই এই দামে দিতে পারছি। বৈধভাবে এলে দাম অনেক বেশি পড়ে। তবে বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, এই মাছগুলি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় কিনে বাজারের মাছ বিক্রেতারা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। এদিকে বাংলাদেশের পাচারকারীরা ইলিশপিছু ১০০০ টাকা করে পায়। ফলে তাদেরও বিপুল মুনাফা হয়।