• শ্বাসকষ্টের রোগীকে ভর্তি নিল না এসএসকেএম, ভর্তির কথা থাকলেও অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ফিরলেন মেয়ে
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খোদ সুপ্রিম কোর্টের আবেদনের পরও কর্মবিরতিতে অনড় চিকিৎসকদের একাংশ। এর ফল ভুগতে হচ্ছে অজস্র রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজনকে। শুক্রবারও কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে রোগী ভোগান্তির একাধিক ঘটনা সামনে আসে। কোথাও তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো গেল না। কোথাও আবার এক-দু’জনকে ভর্তি নিলেও ফিরে যেতে বাধ্য  হলেন অনেকে। বিগত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন হাসপাতালগুলির আউটডোর মোটের উপর সচল থাকলেও দুর্ভোগ যে কমেনি, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তা স্পষ্ট হয়েছে। 

    এদিন দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে মা রেখারানি ভৌমিককে নিয়ে এসেছিলেন বাগনানের বাসিন্দা সর্বাণী ভৌমিক। রেখাদেবী প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সর্বাণীদেবী  কথায়, ‘দ্রুত ভর্তি করানোর দরকার ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা মা’কে পিজিতে ভর্তি নিল না। এভাবে চললে আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় যাবে বলুন তো! বিনা চিকিৎসায় কি মরতে হবে আমাদের?’ সর্বাণীদেবীর স্বামী বিমল ভৌমিক বলেন, ‘ছয় ঘন্টা ধরে একে ওকে অনুরোধ করছি। কিন্তু কিছুতেই ভর্তি নিচ্ছে না। ইমার্জেন্সিতে ফেলে রেখেছে। অক্সিজেন চলছে। বলছে, ক’দিন পর নিয়ে আসুন। কিন্তু, অক্সিজেন খুলে ফেললে আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে কোথায় নিয়ে ঘুরব এখন!’

    প্রায় একই পরিস্থিতি দীপককুমার রামের। টাইলসের কাজ করেন তিনি। আলিপুরে একটি বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পড়ে যান। কোমর ভেঙে যায় তাঁর। তড়িঘড়ি তাঁকে পিজি হাসপাতালে আনা হলে সাফ না করে দিয়েছেন ডাক্তাররা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজা লোধ। তিনি বলেন, ‘একটা ইনজেকশন দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। বলছে, পরের সপ্তাহে নিয়ে আসুন। ডাক্তার নেই। ভর্তি হবে না। আমরাও ধর্ষকের শাস্তি চাই। কিন্তু যেভাবে রোগীদের ফিরিয়ে  দেওয়া হচ্ছে, এর বিচার করবে কে!’

    কমবেশি একই ছবি দেখা গিয়েছে এনআরএস হাসপাতালে। আউটডোর থেকে রোগীকে ভর্তি করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কাগজপত্র রেডি হওয়ার পরেও ভর্তি করানো যায়নি রোগী। একদিকে প্যান্ডেল খাটিয়ে চলছে আন্দোলন। ধর্নায় বসেছেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। শোনা যাচ্ছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। ধর্নামঞ্চের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা জনৈক ব্যক্তি বললেন, ‘ওঁরা জাস্টিস চাইছেন, ভালো কথা। কিন্তু রোগী না দেখে, হাসপাতালের পরিষেবা লাটে উঠিয়ে ওঁরা যা করছেন, সেটা ঠিক নয়। রোগীদের প্রতি তাহলে কোন জাস্টিসটা হচ্ছে?’ কথায় কথায় তিনি জানালেন, সকাল থেকে অন্তত তিনজন রোগীকে ভর্তি করতে বলা হয় আউটডোর থেকে। একজনকেও ভর্তি করানো যায়নি। পাশেই ট্রলিতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন বারাসাতের বাসিন্দা অশোক মণ্ডল। নার্ভের সমস্যায় জেরবার তিনি। তাঁর মেয়ে রত্না মণ্ডল বলেন, ‘আমারও এক মেয়ে আছে। আমিও চাই, বিচার হোক। কিন্তু এভাবে রোগী পরিষেবা না দিয়ে মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন?’ তাঁর সংযোজন, ‘আমার সামনে অন্য একজনকে ভর্তি করে নেওয়া হল। কিন্তু বাবাকে ভর্তি করল না।’ এমন অচলাবস্থা কতদিন চলবে? প্রশ্ন রত্নাদেবীর। 
  • Link to this news (বর্তমান)