• ভাসল মধ্য-দক্ষিণ কলকাতা, ডুবল শহরতলির চার জেলাও  
    বর্তমান | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একদিনে একশো মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি। যার জেরে কার্যত ‘নৌকা চালানোর’ পরিস্থিতি তৈরি হল মধ্য কলকাতায়। শহরের সর্বত্র কমবেশি সমানতালে ভারী বৃষ্টি হয়েছে শুক্রবার। তবে মার্কাস স্কোয়ার, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এম জি রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, কলুটোলার মতো এলাকা কার্যত বানভাসিক চেহারা নিল। কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের দাবি, মার্কাস স্কোয়ার পাম্পিং স্টেশন জোনে এদিন বেলা ১২টা থেকে দুপুর দু’টোর মধ্যে ১০৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। যা চলতি মরশুমে রেকর্ড। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দিনভর কমবেশি দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে শহরতলিতেও।

    এদিনের বৃষ্টিতে শহরে চেনা জলছবির দেখা মিলল। সন্ধ্যা পর্যন্ত জলে ডুবে ছিল রাজপথ, ফুটপাত, অলিগলি। দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাস, বেকবাগান, যোধপুর পার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ এলাকা, গড়িয়া, বালিগঞ্জ, বেহালার বিভিন্ন অঞ্চল ছিল জলের তলায় ডুবে। বর্ষণের জেরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত যানজটও তৈরি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষকে। এদিন দুপুরে ঘণ্টা দু’য়েক মুষলধারে বৃষ্টি চলে। সে সময় গঙ্গায় জোয়ার ছিল। ফলে বেলা দেড়টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত লকগেটগুলি বন্ধ ছিল। যার জেরে উত্তর কলকাতার বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণি, হাতিবাগান, শ্যামবাজার, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, বউবাজার, বড়বাজার, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, বেলেঘাটা, শিয়ালদহ, রাজাবাজার, পাতিপুকুর রেল ব্রিজ সহ শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় হাঁটুসমান জল জমে যায়। অফিস পাড়া, লালবাজারের সামনের রাস্তাতেও জল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরও জল থইথই। কলকাতার পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, কোনও নিদিষ্ট জোনে ১০৭ মিমি বৃষ্টি চলতি মরশুমের রেকর্ড। জল নামাতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে। বহুবছর পর এমন বৃষ্টি হল শহরে। নৌকা চালানোর মতো পরিস্থিতি।

    অন্যদিকে ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পুরসভার এলাকা। বেশ কিছু ওয়ার্ডে রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড ফি বছরের মতোই জলমগ্ন হয়েছে। এর পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়। মধ্যমগ্রাম পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডেরও একই হাল। শুক্রবার বিকেলের পর বৃষ্টি বন্ধ হয়। তারপর জল নামতে শুরু করে সর্বত্র। বৃষ্টির জেরে যশোর রোড থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ভাঙতে শুরু করেছে। হাবড়া, অশোকনগর ও গোবরডাঙা পুর এলাকায় জল জমে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

    অন্যদিকে গঙ্গার ওপারে হুগলিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির দাপট শুরু হয়। সেখানে রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকালে চুঁচুড়া সহ জেলার প্রায় সর্বত্র কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হুগলির বৈদ্যবাটি স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এলাকায় জল জমে। শুক্রবারও তা একই ছিল। হুগলির বেশিরভাগ রেল সাবওয়েতে এদিন জল জমে যায়। সন্ধ্যার পর জলে কিছুটা নামে। চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর সহ একাধিক শহরে জল জমার সমস্যা দেখা দেয়। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে জল নামতেও শুরু করে। কিন্তু ডানকুনি, বাঁশবেড়িয়া সহ বেশকিছু পুর এলাকার একাধিক ওয়ার্ডে জল নামেনি। ফলে ভোগান্তির কবলে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। অনেক জায়গায় চাষের জমিতেও জল জমে। কৃষকদের আশঙ্কা, এর ফলে সব্জি চাষের ক্ষতি হতে পারে। 
  • Link to this news (বর্তমান)