এই সময়, সোদপুর: মেয়ে খুন হয়েছে, সেটাও দু’সপ্তাহ হয়ে গেল। সেই মামলায় সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে দিন দশেক। কিন্তু আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সঞ্জয় রায় নামে যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে কলকাতা পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করেছিল, সে ছাড়া এই মামলায় নতুন কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি সিবিআই। তদন্তের অগ্রগতি কতদূর, তা-ও স্পষ্ট নয় নির্যাতিতার পরিবার থেকে আন্দোলনকারীদের কাছে।এই পরিস্থিতিতে সিবিআই দ্রুত এই নৃশংস অপরাধের কিনারা করুক, চাইছে নির্যাতিতার পরিবার। নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা শুক্রবার সোদপুরের বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের উপর আস্থা উঠে গিয়েছিল বলেই আমরা ভালো এজেন্সি দিয়ে তদন্ত চেয়েছিলাম। আমরা চাই, সিবিআই ভালো এজেন্সি হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। আমরাও ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। ১৪ দিন হয়ে গেল, একা সঞ্জয় রায় ছাড়া কোনও রেজ়াল্ট আমরা এখনও পাইনি। আমরা চাই, সবাই আর একটু তৎপর হয়ে কাজ করুক। সিবিআইয়ের উপর মানুষের যে আস্থা রয়েছে, তা ধরে রাখতে তারা দ্রুত ঘটনার কিনারা করুক।’
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করেছিলেন, সিবিআই পাঁচদিন পরে তদন্তভার নিয়ে দেখতে পেয়েছে আরজি করের ‘সিন অফ ক্রাইম’ বা অকুস্থলে অনেক অদলবদল হয়েছে। এ দিন একই কথা শোনা যায় নির্যাতিতার বাবার গলায়। তাঁর বক্তব্য, ‘প্রথম থেকেই বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তা না হলে সিবিআইয়ের এতদিন সময় লাগত না। সেই কারণেই হয়তো সিবিআই এখন পলিগ্রাফ টেস্টের মতো অন্যভাবে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করছে।’
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, ‘কাউকে আড়াল করা হচ্ছে, এটা প্রথম থেকেই বুঝতে পারছিলাম। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আড়াল করা হচ্ছে। এমন কেউ জড়িত, যাকে আড়াল করার প্রয়োজন হয়েছিল।’ যদিও রাজ্যের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছে, কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়নি।
পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপের ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা আছে। কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, মেয়ের মোবাইলটি ভালো করে খুঁটিয়ে দেখা হোক। সেখান থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্য, ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিলে যে চক্রান্ত করেছিলেন, তা এখন প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
তাঁদের কথায়, ‘কলকাতা পুলিশ পৃথিবী বিখ্যাত বলা হয়। কী রকম বিখ্যাত, সেটা আমরা বুঝতে পারলাম না।’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দালালচক্র কাজ করছে বলে এ দিন অভিযোগ করেন বাবা মা। নির্যাতিতার পরিবারের স্পষ্ট কথা, তাঁরা আন্দোলনরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের পাশে আছেন।
প্রয়োজনে আন্দোলনে তাঁরাও যোগ দেবেন। এ দিন নিহত তরুণীর বাবা-মা বলেন, ‘মেয়ের হত্যার বিহিত ও বিচার চাই। নিরপেক্ষ ভাবে যে আমাদের ডাকবে, তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেবো।’