পরিকাঠামোয় ঘাটতি মিটলে তবেই আসবে নিরাপত্তা, মত চিকিৎসকদের
এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: খাবি খেতে থাকা রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে ইমার্জেন্সির ভিতরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেওয়া যায়নি অক্সিজেন। হাতের কাছে সিলিন্ডার মেলেনি। একটু পরে রোগী মারা যান। পরিজন ভাঙচুর চালান ইমার্জেন্সিতে। নিগৃহীত হন জুনিয়র ডাক্তার ও নার্স। ঘটনাস্থল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।মাঝরাতে বুকের যন্ত্রণায় কাতর রোগিণীকে নিয়ে এনআরএসের ইমার্জেন্সিতে আসেন পরিজন। হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ করেন চিকিৎসক। সবচেয়ে জরুরি ওষুধটি হাসপাতালে ছিল না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে আনতেই মারা যান রোগিণী। মার খান ইমার্জেন্সিতে ডিউটিরত চিকিৎসক।
হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত কিশোর ভর্তি ছিল এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। আচমকা অবস্থার অবনতি হয়। কর্মবিরতি চলায় জুনিয়র ডাক্তারের অভাব ছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। মারা যায় কিশোর। একমাত্র যে জুনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন, মেরে তাঁর মুখ ফাটিয়ে দেন মৃতের বাবা ও দুই দাদা।
এমন নজির আরও অনেক। ফলে নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন চিকিৎসকেরা। অনেকে বলছেন, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তার যা হাল, বিশেষ করে রাতে, তাতে গত ৯ অগস্ট দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি আরজি করের বদলে অন্য হাসপাতালেও ঘটতে পারত। নিরাপত্তার দাবি মেনে সম্প্রতি আরজি করে মোতায়েন হয়েছে সিআইএসএফ।
কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি শোধরাতে নিরাপত্তাকর্মীই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। বরং পরিকাঠামো শোধরানোয় বেশি জোর দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, এতেই কমবে হামলার ঘটনা।
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘স্বাস্থ্যক্ষেত্র খুবই সংবেদনশীল জায়গা। মানুষের অপ্রাপ্তি, পরিকাঠামোর খামতি, চিকিৎসা পেতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ক্ষোভ আছড়ে পড়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নতি না করলে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ না করলে, দুষ্কৃতী নিয়ন্ত্রণে কড়া অবস্থান না নিলে, চিকিৎসক নিগ্রহ ও হামলাবাজির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ পরিস্থিতি শুধু সিআইএসএফ, পুলিশ দিয়ে সামলানো যাবে না।’
তাঁর মতে, এর জন্যে সমাজের সর্বস্তরের পরিবেশ পরিবর্তনে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও জরুরি। পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতালে সাধারণ স্বাচ্ছন্দ্য, ডিউটি রুম, রেস্ট রুম, পর্যাপ্ত নিজস্ব সিকিউরিটি, সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রবেশদ্বার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থাও প্রয়োজন।চিকিৎসক সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্রও মনে করেন, সব হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি জরুরি।
পরিকাঠামোর অভাব থাকলে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তাঁর কথায়, ‘হাসপাতালের ভিতরকার দুর্নীতিও দূর করা দরকার। কারণ দুর্নীতি থেকেই অপরাধমূলক কাজের প্রবণতা তৈরি হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং ডাক্তারি ছাত্রদের উপরে প্রশাসনিক সন্ত্রাস বন্ধ করাও দরকার।’
একই মত চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষেরও। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার সমস্যাটা মূল নয়। আসল হলো স্বাস্থ্যক্ষেত্রের ভিতরের ঘুণটা সাফ করা।’ এই দাবি নিয়ে শুক্রবার তাঁরা স্বাস্থ্যভবনেও যান স্বাস্থ্যকর্তাদের স্মারকলিপি জমা দিতে। সজল মনে করেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুরক্ষাকর্মী দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। জরুরি পরিকাঠামোর উন্নয়ন।