• নবান্ন অভিযানে 'ছাত্র' কারা! চিন্তায় প্রশাসন, দুশ্চিন্তা NET নিয়েও
    এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল-আন্দোলন অব্যাহত। ডাক্তার, আইনজীবী, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিও প্রতিবাদ কর্মসূচি নিচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। তবে আগামী মঙ্গলবার, ২৭ অগস্ট এই ইস্যুতে প্রথম নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে এই অভিযানের ডাক দেওয়া হলেও এর পিছনে বকলমে গেরুয়া শিবিরেরই ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্যের একাধিক ছাত্র সংগঠনের। ঘটনাচক্রে ওই দিনই ইউজিসি নেট পরীক্ষা রয়েছে। ফলে ওই দিন নবান্ন অভিযান হলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে এবং অভিযান ঘিরে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হতে পারে বলেও আশঙ্কা রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের।

    ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে ওই সংগঠনের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় নবান্ন অভিযানের যে ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে শুক্রবার সম্মতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জনৈক দেবরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি এই অভিযানের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন শুনানি চলাকালীন রাজ্য সরকারও জানায়, এই সংগঠনের তরফে পুলিশের কাছে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি নবান্ন অভিযানের।

    কারা অভিযান করবে, তা-ও স্পষ্ট নয়। তবে বিচারপতি ট্যান্ডনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, যেহেতু আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কোনও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিতে নিষেধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট, তাই এই ব্যাপারে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।

    ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ আদতে কারা?

    এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে প্রবীর দাস, সায়ন লাহিড়ী ও শুভঙ্কর হালদার নামে তিনজন নিজেদের ‘ছাত্র’ বলে দাবি করে জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তাঁদের তিনজনের মধ্যে পরিচয়। তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তবে আরজি করে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। সেই দাবিতেই তাঁদের এই নবান্ন অভিযানের ঘোষণা।

    কী করেন এই তিন ‘ছাত্র’? তাঁরা জানান, প্রবীর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্র, সায়ন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন এবং শুভঙ্কর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই বিএড করছেন। তাঁদের দাবি, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা ডাক দেওয়ার পরে আরও অনেক ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ এতে সাড়া দিয়েছেন। আমরা কোনও রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে এই অভিযানে যাব না। সাধারণ মানুষই এই মিছিলে হাঁটবেন।’

    তাঁদের এও দাবি, যেহেতু তাঁরা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানেরই ইস্তফা দাবি করছেন, তাই প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নেবেন না। কিন্তু অরাজনৈতিক মঞ্চ মিছিল ডাকলেও তার পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে— এই অভিযোগ কেন উঠছে?

    সূত্রের দাবি, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকের জন্য ঘর বুক করা হয়েছিল জনৈক পুলকেশ পণ্ডিতের নামে, যাঁর সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র যোগ আছে বলে অভিযোগ উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কয়েকটি ছবিও (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) আপলোড করেছেন কেউ কেউ এবং তার ভিত্তিতে ‘হ্যাশট্যাগ এবিভিপি এক্সপোজ়ড’ বলে শেয়ারও হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    পুলকেশ অবশ্য বলেন, ‘আমি কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি এই পশ্চিমবঙ্গের একজন ছাত্র। একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবেই আমি নবান্ন অভিযানে অংশ নেব। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই।’ এবিভিপি-ও প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই অভিযানের ডাক দেয়নি।

    এবিভিপি-র প্রদেশ সম্পাদক (দক্ষিণবঙ্গ) অনিরুদ্ধ সরকারের বক্তব্য, ‘এবিভিপি নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে এবিভিপি-র কোনও সম্পর্ক নেই। তবে রাজনৈতিক মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে সমস্ত অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনের প্রতি এবিভিপি-র নৈতিক সমর্থন থাকবে।’

    আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে গত ১৪ অগস্ট রাত দখলের ডাক দিয়েছিল মেয়েরা। তাতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আমজনতা সামিল হয়েছিল। তারপরেও বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিবাদ, আন্দোলনে সামিল হয়েছে। তবে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ বলে যখন নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক ইন্ধনের গন্ধ পাচ্ছে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলি।

    এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘ছাত্রসমাজের নাম দিয়ে এবিভিপি-ই ২৭ তারিখ নবান্ন অভিযানের নাটক করছে। অন্য কোনও ছাত্র সংগঠন এই কর্মসূচির ডাক দেয়নি। এবিভিপি মানেই দাঙ্গা, বিভাজন আর বেসরকারিকরণ। কিছু খুচরো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে সেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অ্যাড করে ছাত্র সমাজ বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।’

    টিএমসিপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুদীপ রাহা বলেন, ‘ওটা ছাত্র সমাজ নয়, পদ্ম সমাজ। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ আন্দোলন করতে পারে। এখন তো সিবিআই আরজি কর ঘটনার তদন্ত করছে। ওদের উচিত, নবান্ন অভিযান না করে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করা, যাতে কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে, সে ছাড়া অন্য কেউ দোষী থাকলে, তাকে দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।’

    রাজ্য যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অর্ঘ্য গণেরও বক্তব্য, ‘ছাত্র সমাজ বলে কোনও ছাত্র সংগঠনের কথা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র ইতিহাসে নেই। এর পিছনে কারা আছে, তা-ও আমরা জানি না। আমরাও দোষীদের শাস্তি চাই। তবে নবান্ন অভিযানের কোনও কর্মসূচি আমাদের নেই।’

    এই অভিযানের জন্য আগামী মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিট ও সাঁতরাগাছিতে বেলা একটায় জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানকে ঘিরে হাওড়া ও কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হতে পারে— এই আশঙ্কার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনার কথাও এ দিন আদালতে জানায় রাজ্য।

    পাশাপাশি ইউজিসি নেটে বসবেন যে সব ছাত্রছাত্রী, তাঁদেরও দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে কোর্টে জানানো হয়। যদিও আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল যে কেউ করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পুলিশকেই করতে হবে।
  • Link to this news (এই সময়)