‘আমি নির্দোষ, কিছু করিনি’, আদালতে দাবি আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়ের
প্রতিদিন | ২৪ আগস্ট ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: ‘আমি নির্দোষ। আমি কিছু করিনি।’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল সঞ্জয় রায়। অস্বস্তিতে পুলিশ। সিবিআইয়ের ঝানু অফিসারদেরও কপালে ভাঁজ। কিন্তু রীতিমতো ডাকাবুকো বলে পরিচিত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় কেঁদেকেটে একশা! দেখে কে বলবে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের যে ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ, সেই কুকীর্তিতে মূল অভিযুক্তই হল কীর্তিমান এই সঞ্জয়!
শিয়ালদহ আদালত থেকে প্রেসিডেন্সি জেল। শুক্রবার এভাবেই বারবার কেঁদেকেটে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সে। জেরা চলাকালীনও নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে তার স্বপক্ষে অনেক কিছুই সিবিআইকে জানিয়েছে সঞ্জয়। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, মিথ্যাচার করছে সঞ্জয় রায়। হেফাজতে থাকাকালীন বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তদন্তের অভিমুখ ঘোরাতে চাইছে সে। সত্যিটা ঠিক কী, তা খুঁজে বের করতেই এবার সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষার দিকে আপাতত তাকিয়ে সিবিআই।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, জেরায় সঞ্জয় বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে যে, সেদিন (চিকিৎসকের দেহ যেদিন মেলে আর জি করে) সকাল ৬টা নাগাদ সেমিনার হলে যায়। অপারেশন থিয়েটারে পুলিশ পরিবারের এক রোগীকে খুঁজতে খুঁজতেই সে সেমিনার হলে পৌঁছে গিয়েছিল। সঞ্জয় সিবিআইকে জানিয়েছে, সেখানে গিয়ে সে কোনও দেহ দেখতে পায়নি। এই তথ্য সিবিআই যাচাই করছে। গত ৯ আগস্ট ভোররাতে আর জি কর হাসপাতালে তার গতিবিধি নিয়েও সঞ্জয় বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। যদিও তার সামনে ভোররাতের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ তুলে ধরার তার কথায় বহু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলেও অভিমত সিবিআইয়ের।
এদিকে, শুক্রবার থেকে আপাতত সঞ্জয় রায়ের নতুন ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পহেলা বাইশ’-এর ২১ নম্বর সেল। ওই ঘরের ‘বাসিন্দা’ এক খুনের আসামি হাবিবকে অন্য জায়গায় সরিয়ে সেখানে সঞ্জয়কে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই একের বাইশ বা ‘পহেলা বাইশ’-এর দু’নম্বর ঘরের বাসিন্দা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত তথা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সিবিআই ও আদালত সূত্রের খবর, নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে শুক্রবার প্রথম দফায় সঞ্জয় কান্নায় ভেঙে পড়ে শিয়ালদহ আদালতের তিনতলায় দ্বিতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটর ঘরে। সে পলিগ্রাফ পরীক্ষায় রাজি আছে কি না, তা জানার জন্যই বিচারকের সামনে তাকে পেশ করা হয়। পলিগ্রাফ পরীক্ষার বিষয়টি ঠিক কী, সেটাই তাকে বলতে শুরু করেছিলেন বিচারক।
তখনই আচমকা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে সঞ্জয়। এর পর তাকে যখন শিয়ালদহ আদালতের এসিজেএম আদালতে তোলা হয়, তখনও তার চোখে ছিল জল। বিচারক তাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর সঞ্জয়কে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই সঞ্জয়কে জেলের বাইরের অফিসে বসানো হয়। তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা একেবারেই নিরাপদ নয় বলে বিবেচনা করে সেলেই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলের অফিসে সঞ্জয়কে ঘিরে ছিলেন কয়েকজন কারা আধিকারিক ও কারারক্ষী। তাঁরা তার কাছে রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে জানতে চান, কেন সে এই নারকীয় কাজ করেছে? জবাবে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে সঞ্জয়। বলতে থাকে, ‘‘আমি নির্দোষ। আমি কিছু করিনি।’’
ওই সময় প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার অন্য কাজে জেলের বাইরে ছিলেন। তিনি জেলে ফেরার পর কারা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানিয়ে দেন, সঞ্জয় রাইয়ের নিরাপত্তার জন্যই তাকে রাখা হবে একের বাইশ সেলে। যদিও এই সেলটিতে সিবিআই ও ইডির হাতে ধৃত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও রেশন বন্টন দুর্নীতির মূল অভিযুক্তরা থাকার কারণে আর বিশেষ জায়গা নেই। এ ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েকজন হাই প্রোফাইল বন্দি। শেষ পর্যন্ত খুনের আসামি হাবিবকে অন্য নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে সেলের ২১ নম্বর ঘরে রাখা হয় সঞ্জয় রাইকে। সেলে নিয়ে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য সঞ্জয়কে নিয়ে যাওয়া হয় জেল হাসপাতালে। রক্তচাপ-সহ তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক বলেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা কারাকর্তাদের জানান।
কারা সূত্রের খবর, ওই ২১ নম্বর সেলের ঠিক পিছনেই রয়েছে ফাঁসিকাঠ। ঘটনাচক্রে রাজ্যের বিভিন্ন মহল থেকে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসির দাবি উঠেছে। সেলে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে রীতিমাফিক কম্বল, থালা, গ্লাস দেওয়া হয়। রাতে সে খাওয়াদাওয়াও করেছে বলে জানা গিয়েছে। তার জন্য জেল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। কারারক্ষীরা তার উপর নজর রাখছেন। সিসিটিভির নজরদারিতে রয়েছে সেলের ২১ নম্বর ঘরের বাইরের অংশ। তবে প্রয়োজনে নজরদারির জন্য ওই ঘরের ভিতরেও সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো হতে পারে বলে জানিয়েছে কারাদপ্তর।