• জোশ ফিরছে, তবু সাবধানী পদ্মশিবির
    এই সময় | ২৪ আগস্ট ২০২৪
  • মণিপুস্পক সেনগুপ্ত

    এত দিনে জোশ ফিরেছে দলীয় কর্মীদের। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচি শেষে এমনটাই উপলব্ধি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। সূত্রের খবর, এই ‘সুখবর’ তাঁরা জানিয়েছেন দিল্লিকেও। আপাতত বিজেপির লক্ষ্য, প্রতিবাদের ঝাঁজ বাড়িয়ে আরজি কর নিয়ে আন্দোলনের রাশ কৌশলে নিজেদের হাতে নেওয়া। তবে সেই লক্ষ্যে সাবধানে পা ফেলতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।কারণ তাঁরা বিলক্ষণ জানেন, আরজি কর পর্বে তাঁদের সামান্য ভুল পদক্ষেপ রাজ্যের আর এক বিরোধী দল সিপিএমের পায়ের তলার মাটি শক্ত করবে। আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে নাগরিক সমাজে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

    বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি গোড়ায় সেই আন্দোলনের অংশীদার হয়ে উঠতে পারেনি। নাগরিক আন্দোলনে পতাকাহীন ভাবে সামিল হওয়া নাকি, পদ্ম-ঝান্ডা হাতে সমান্তরাল ভাবে আন্দোলন শুরু করা, এই দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতেই বিজেপির কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত দিল্লির নির্দেশে গত বুধবার থেকে বঙ্গ-বিজেপি ঐক্যবদ্ধ ভাবে পথে নেমেছে।

    শ্যামবাজারে বিজেপির ধর্নামঞ্চে এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষকে। পরের দিন বৃহস্পতিবার তাঁদের এক মিছিলে উল্টোডাঙার হাডকো মোড় থেকে সল্টলেকে স্বাস্থ্যভবনের উদ্দেশে হাঁটতেও দেখা যায়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বঙ্গ-বিজেপিতে যা খুবই ইতিবাচক ছবি বলেই মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের অনেকেই।

    দলীয় ওই কর্মসূচি রাজনৈতিক ভাবে কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে নানা মত থাকলেও সাংগঠনিক ভাবে স্বাস্থ্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ইঙ্গিতবাহী, তা নিয়ে পদ্ম-ব্রিগেডে কোনও সন্দেহ নেই। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর দলীয় কর্মীদের একটা বড় অংশ বসে গিয়েছিলেন।

    এ ছাড়াও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেও পুরোনো কর্মীদের অনেকেই বহু দিন নিষ্ক্রিয়। তাঁদের অনেককেই বৃহস্পতিবার সল্টলেকের রাস্তা ধরে পদ্ম-ঝান্ডা হাতে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। এটাই সব থেকে আশার কথা।’ দলের এক রাজ্য পদাধিকারী বলেন, ‘বহু দিন ধরেই দিল্লি আমাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা করছে। তবে হাজার চেষ্টা করেও দিল্লি একসূত্রে আমাদের বাঁধতে পারছিল না। আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের এক করে দিয়েছে।’

    আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বিজেপি। সেখানেও দলের যুযুধান সব পক্ষকে সামিল হতে দেখা গিয়েছে—এমনটাই বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘বিজেপি ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে, থাকবে।’

    তবে বিজেপির একটি অংশের ব্যাখ্যা, আরজি কর নিয়ে এখন পর্যন্ত সব থেকে বেশি দাগ কেটেছে নাগরিক সামাজের আন্দোলন। ফলে পতাকা নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, পতাকা ছেড়ে নাগরিক প্রতিবাদেও সামিল হওয়া উচিত বিজেপি কর্মীদের।

    যার ইঙ্গিত দিয়ে ক’দিন আগেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ডাকা ২৭ তারিখের নবান্ন অভিযানে আমাকে ডাকলে আমি অবশ্যই পতাকা ছাড়া তাতে অংশ নেব।’
  • Link to this news (এই সময়)