তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে সিবিআই-কে, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই: দেব
আনন্দবাজার | ২৪ আগস্ট ২০২৪
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যুর পর পেরিয়ে গিয়েছে পনেরোটি দিন। ধরা পড়েছে এক অভিযুক্ত। কিন্তু তারপরও তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে না শহর কলকাতা। এ ক’দিন দফায় দফায় রাজপথে নেমেছে মানুষ। রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ স্কুল পড়ুয়া ছাত্র সমাজও মিছিল করেছে কলকাতার রাস্তায়। মোটামুটি সকলেই মনে করছেন তদন্তে যত দেরি হবে বিচারে তত সমস্যা হবে। আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, ন্যায় বিচার পেতে অসুবিধা হবে নির্যাতিতা চিকিৎসক পড়ুয়ার পরিবারের।
ঘটনার সময় ছুটি কাটাতে বিদেশে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেতা দেব। সেখান থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানালেও প্রতিবাদে তেমন ভাবে যোগ দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। শনিবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জে আর্টিস্ট ফোরামের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিলেন দেব। তিনি অবশ্য দাবি করলেন, তদন্তের স্বার্থে যতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন ততটুকু দিতেই হবে। দেব বলেন, “তদন্তের ভার রয়েছে ভারতবর্ষের সেরা সংস্থার হাতে। সিবিআই-এর উপর ভরসা আমাদের করতেই হবে। কলকাতা পুলিশের হাতে এক সময় তদন্তের দায়িত্ব ছিল কিন্তু তারা দু’দিনের বেশি সময় পায়নি। এখন সিবিআইকে প্রয়োজনীয় সময়টুকু দিতেই হবে।”
সিবিআই-এর দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করার জন্যও মানুষের কাছে আবেদন জানান দেব। পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমরা চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। শুধু তাই নয় যারা দোষীদের আড়াল করবার চেষ্টা করছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।” আর জি করের পাশাপাশি দেবের গলায় উঠে আসে সারা দেশে ঘটে যাওয়া অজস্র নারী নির্যাতনের কথা। তিনি বলেন, “শুধু কি আরজি কর? গত ১৪ দিনে সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ঘটে গিয়েছে। দেশ জুড়ে এত প্রতিবাদ চলছে তবু কারও মনে কোনও ভয় নেই! কিছুই করতে পারছি না আমরা? এই সময় আমাদের সকলকে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
তৃণমূল সাংসদদের গলায় প্রতিফলিত হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ভারতবর্ষের আইনে ধর্ষকের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেব বলেন, “স্বাধীনতার পর বোধহয় এই প্রথম আমরা এত বড় একটা আন্দোলন একসঙ্গে লড়ছি। তাই ধর্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এক হতে হবে দল মত নির্বিশেষে। সারাদেশে ধর্ষকের একটাই শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড।”
স্কুল শিক্ষায় সচেতনতা তৈরির বিষয়েও মত প্রকাশ করেন দেব। তিনি বলেন, “শুধু মেয়েদের নয়, ছোট ছোট ছেলেদেরও শেখাতে হবে কোন স্পর্শ ভাল, কোন স্পর্শ খারাপ। সব শিক্ষা, সব সহবৎ মেয়েদের জন্য নয়। যে কোনও জায়গায় মহিলারা শ্লীলতাহানির শিকার হন। কড়া শাস্তির ব্যবস্থা না করলে এ থেকে মুক্তি নেই।”
দেবের কথায় উঠে আসে হাথরাস, আশারাম বাপু, রামরহিমের কথা। উঠে আসে বিলকিস বানুর ধর্ষণ প্রসঙ্গ। তিনি প্রশ্ন করেন, “কী করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও সংশোধনাগারের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা? কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে শাস্তির ক্ষেত্রে?” তিনি বলেন, “যে কেন্দ্র সরকার রাতারাতি নোটবন্দি করেছিল, ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছিল তাদের কাছে আবেদন, ধর্ষকের শাস্তি বিধান যত শীঘ্র সম্ভব করে দেখান। আমি কোনও রাজনৈতিক কথা বলতে চাই না। কিন্তু এ কথা না বললেই নয়। যতদিন না, পুরুষ ভয় পাবে কোনও মহিলার দিকে কু-নজরে তাকাতে, ততদিন এই কদর্যতা রোখা যাবে না।”
নবান্ন ঘেরাও প্রসঙ্গেও দেব উষ্মা প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, “এই আন্দোলনটা অরাজনৈতিক ছিল, কারণ মানুষ চেয়েছিল আগামীকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, প্রতিবাদ করতে। কিন্তু এখন নবান্ন অভিযান হচ্ছে। কোন রাজ্যে ক’টা ধর্ষণ হয়েছে তার হিসাব কষা হচ্ছে। এই কি সময় এ সব করার! বরং সকলে মিলে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়তে হবে।”