• অমানবিক আচরণ, ওঝার নিদানে ‘ভূত ছাড়াতে’ জুতো মুখে হাঁটানো হলো তরুণীকে
    এই সময় | ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়, বহরমপুর: সমাজের নানা স্তর থেকে সচেতনতা চালানো হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। ওঝা, ঝাড়ফুঁক, এ সবের কুপ্রভাব নিয়েও আলোচনা কম হয় না। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতদূর হচ্ছে? ফের প্রশ্ন তুলে দিল বহরমপুর শহরের একটি ঘটনা। যেখানে বছর ২৪-এর এক তরুণীকে ওঝার নিদানে মুখে চামড়ার জুতো নিয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। বাধ্য করেন তাঁরই মা-বাবা-দাদারা।বহরমপুর শহরের ব্যস্ত রাস্তায় অমন একটি দৃশ্য দেখে আশপাশের মানুষও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ। শেষে খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ তরুণীকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। এখনও কিছু মানুষের কুসংস্কারের শিকড় যে কত গভীরে, বহরমপুরের শহরে এই ঘটনা তাকেই সামনে আনল বলে মনে করছে সমাজের একটা বড় অংশ।

    ঘটনাটা শুক্রবার রাতের। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা চুঁয়াপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের গঙ্গাঘাট এলাকায় বছর ২৪-এর ওই তরুণীকে মুখে একটি চামড়ার জুতো নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। পিছনে তাঁর বাবা-মা-দাদারা। তরুণী যাতে জুতোটা মুখ থেকে ফেলে না দেন, সে ব্যাপারে সতর্ক করে নাগাড়ে চিৎকার করে চলেছেন তাঁরা।

    এমনকী, মাঝেমধ্যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে আঘাতও করা হচ্ছে তাঁকে। এ দৃশ্য রাস্তার দু’পাশের মানুষের চোখে পড়লেও কেউ এগিয়ে পর্যন্ত আসেননি। ওই রাস্তাতেই বহরমপুর স্টেশন, মেডিক্যাল কলেজ, কৃষ্ণনাথ কলেজ, পুলিশ সুপারের বাংলো। ঘটনাটা কী? পরিবারের দাবি, মেয়েকে ‘ভূতে ধরেছে’। তাই ‘ভূত ছাড়াতে’ ওঝার নিদানে ওই তরুণীকে বাড়ি থেকে চামড়ার জুতো মুখে দিয়ে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    এ ভাবে গঙ্গা পর্যন্ত গিয়ে স্নান করলেই নাকি ছেড়ে যাবে ভূত! সূত্রের দাবি, চুঁয়াপুরেরই বাসিন্দা ওই তরুণী বেশ কিছুদিন ধরে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন। বহু চিকিৎসক দেখানো হলেও মেয়েকে স্বাভাবিক করা যায়নি বলে পরিবারের দাবি। এরপরে হাতা কলোনির এক ওঝার কাছে তাঁকে নিয়ে যায় পরিবার। সেই ওঝাই ঝাড়ফুঁক করে ওই নিদান দেয়।

    আপাতত গা-ঢাকা দিয়েছে ওঝা। মেয়েটির বাবা বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমার মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। সব সময়ে আতঙ্কে থাকে। বাড়িতে রাখা যাচ্ছে না। নানা ধরনের অস্বাভাবিক কাজকর্ম করছে। মেয়েকে সুস্থ করে তুলতেই এই পথ ধরেছিলাম।’ সে রাতে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে বেশ কিছু ওষুধ দেন। পরিবারের লোকেদের কাউন্সেলিং-ও করেন।

    মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মনোবিজ্ঞান এত উন্নত হওয়ার পরেও এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। নানা পারিবারিক সমস্যার কারণে মানুষের মন ও নার্ভের উপর চাপ পড়লে অজান্তেই নানা অস্বাভাবিক আচরণ করে মানুষ। কিন্তু আমজনতা যতদিন এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে না-আসবে, ততদিন এই ওঝা, ঝাড়ফুঁকের সমস্যার সমাধান হবে না।’

    স্কুল শিক্ষক তথা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য অনিন্দ্য সিনহা বলেন, ‘আমরা মেয়েটির পাড়ায় যাব। বোঝাব যে, এ ধরনের কাজ কুসংস্কার ছাড়া কিছু না।’ বহরমপুর থানার আইসি উদয় শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘অভিযুক্ত ওঝার খোঁজে তল্লাশি চলছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
  • Link to this news (এই সময়)